সুন্দরী

সরকারবাবু তার স্ত্রীলিঙ্গ প্রাণীটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার নামটিই রেখে দেন সুন্দরী। সে সুন্দরী গায়ে-গতরে বেড়ে উঠে তার সৌন্দর্যকে চারদিকে ঢোল পিটিয়ে। আর সে সাথে অতিরিক্ত পরিচর্যায় অর্জন করে দ্বিগুণ শক্তি, আর ততোধিক হিংস্রতা এবং পাশবিকতার সাথে নিষ্ঠুরতা। সরকার বাবু দেখে ও দেখেন না। বরং প্রশ্রয়ই দিতে থাকেন। শেষোক্ত গুণাবলীর জন্য তার সাথে মেলামেশার সাথী ও হয়ে যায় বিরল। সে নিঃসঙ্গতা তাকে আরও ক্ষেপা বানিয়ে তুলে ধীরে ধীরে। ঘরে ছিল তার এক সহোদরা, নাম তার কৃষ্ণা। পাছে সরকার বাবুর আদর ভাগাভাগি হবার ভয়ে সুন্দরী বেপরোয়া হয়ে কৃষ্ণার পেছনে লাগে। তাদের মা প্রতিবাদ করলে সুন্দরী তাদের মা এবং কৃষ্ণার যমজ বোন সহ কৃষ্ণাকে ভিটেছাড়া করে অল্প দিনের মধ্যেই। এ সবই ঘটে সরকার বাবুর চোখের সামনে, কিন্তু সবকিছুরই নীরব সাক্ষী হওয়া ছাড়া তার কিছুই করার নাই এখন। কিছু করার সময় আর ক্ষমতা যখন ছিল তখন আস্কারা দিয়ে বরং সুন্দরীর স্বেচ্ছাচারিতাকে বাড়তেই দিয়েছেন, এখন সে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখন তিনি সুন্দরীকে না পারছেন ফেলতে, না পারছেন রাখতে। তার চিন্তা হয় কখন কোথায় সুন্দরী কি গোলমাল বাঁধিয়ে বসে। আর এলাকায় সুন্দরীর যা খ্যাতি, তাতে তেমন কিছু যদি ঘটেই যায়, তবে তো এলাকাবাসী একজোটে সত্যমিথ্যা মিশিয়ে তার বিরদ্ধেই সাক্ষ্য দেবে। সে সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে সরকারবাবু বিশ্ব বিখ্যাত পেশাদারী ফটোগ্রাফার নারায়ণকে নিয়োগ করেন গোপনে দূর থেকে সুন্দরীর সমস্ত কীর্তির ছবি তুলে রাখতে, যেন কেউ মিথ্যার আশ্রয় নিতে না পারে।

গল্পের পাত্রপাত্রী উত্তর ভারতের রাজস্থান প্রদেশের গহীনবন জঙ্গলে ঘেরা এক উপেক্ষিত এলাকার বাসিন্দা। সেখানে এককালে রাজপুতদের আনাগোনা ছিল, ছিল তাঁদের বিশ্রাম খানা, মন্দির সহ আরও অট্টালিকা। সে কাহিনি এখন ইতিহাস আর সে সমস্ত স্থাপনা এখন পরিত্যক্ত ভূতুরে বাড়ি। যেখানে এককালে চলত তরবারি যুদ্ধের মহড়া, এমনকি গোটা কয়েক খণ্ডযুদ্ধ, সেখানে এখন অস্ত্র ছাড়াই অসুর শক্তিধারী মাস্তানের রাজত্ব। তাঁদের সাথে আধুনিক মানুষের কোন সম্পর্ক নাই, কারণ তাঁদের সামাজিক মেলামেশাকে বিশেষ করে বিয়ে বহির্ভূত যৌন আচরণকে তারা স্বীকৃতি দেয় না। অবশ্য গোপনে হলে কে কার খবর রাখে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পেরিয়ে বছর গড়িয়ে যায়। বিতাড়িত কৃষ্ণা আশ্রয় নিয়েছিল পিতৃভিটা থেকে চার মাইল দূরে পাশের এলাকাতেই যেখানে ছিল তারই গোত্রের এক সুপুরুষ, নাম তার স্টার। তার দুই চোখের ওপর তারকারূপ টাট্টু দেখে কেউ কোনদিন তাকে স্টার বলেছিল। নামটা তার মনে ধরে। তাই তার আকৃতি আর প্রকৃতিতে বেমানান হলেও সে তারকা চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টাও সে করেনি কোনদিন, আর এভাবেই তার স্টার নামটা ও হয়ে যায় চিরস্থায়ী। সে ছিল স্থানীয় মাস্তান, সুতরাং বাস্তুহারা কৃষ্ণাকে বিছানায় পেতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি তাকে। আসলে বিছানা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করত না, বরং উত্তেজনাকে তৎক্ষণাতই প্রশমন করা ছিল তার ধর্ম, সেটা আঙ্গিনাতেই হোক বা গাছের নিচেই হোক। উপর্যুপরি আদিম খেলায় কৃষ্ণা গর্ভবতী হলে দেখা গেল তার পেটে বাচ্চা, একটি নয়, দুটি নয়। বরং তিন তিনটি, আর ফলে যা হবার তাই হোল। প্রসব বেদনা শুরু হয় চল্লিশ সপ্তাহের বহু আগেই, কিন্তু ফুটফুটে তিনটি বাচ্চাই বেরিয়ে আসে সম্পূর্ণ সুস্থভাবে, দুটি ছেলে আর একটি মেয়ে। তবে চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল কৃষ্ণাকে। অল্পদিনেই তিনটি দুধের শিশুকে রেখে কৃষ্ণা চলে যায় দুনিয়া ছেড়ে। সবাই ধরে নিয়েছিল শিশু তিনটিও অচিরেই তাদের মাকে অনুসরণ করবে। বিশেষ করে এ গোত্রে বীজ বপন ছাড়া সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্ব যেখানে বিরল, এবং স্টার ও এর কোন ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তিন জনই বেঁচে যায় অভাবিতভাবে। এ গ্রামেই ছিল এক দর্শনীয় আর দুর্দান্ত বীর পুরুষ যার নাম জালিম। আর এ নামের শানে নজুল হচ্ছে তার গায়ে ছিল তিনটি বাঘের চেয়েও অধিক শক্তি, যার সৎ ব্যবহার সে করত এলাকার নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবার ওপর জুলুম করে। তাকেই কিনা দেখা গেল তিনটি নাবালক শিশুকে কোলেপিঠে করে পিতৃস্নেহে বড় করতে। তার এত বড় মানবিকতার পরও তার নাম পরিবর্তন হয় নি গ্রামে। বরং তার স্বেচ্ছাচারিতা বোধ হয় সে বাড়িয়েই দিল সমাজের এই উদাসীনতার প্রতিবাদে। এলাকার বিজ্ঞজনেরা বলে, এরা নিশ্চয়ই জালিমেরই সন্তান। কে জানে কার কাম সফল হয়েছিল কৃষ্ণাকে গর্ভবতী করতে, জেনেটিক পরীক্ষা করার সাহস তো কারোরই নেই। এছাড়া কৃষ্ণাতো এ অরাজকতা দেখে এসেছে নিজ ঘরেই।

এদিকে এখন সুন্দরী অনুভব করতে থাকে তার দাম্ভিকতার কুফল। কেউ তার কাছে আসে না, কেউ তাকে ভালো ও বাসে না। তাতে অবশ্য সুন্দরীর কিছু যায় আসে না। কিন্তু ভালো কেউ নাই বাসুক, যৌবনের ক্ষুধাকে কতদিন অস্বীকার করতে পারবে? অন্যদিকে স্টার চালিয়ে যাচ্ছে তার পুরুষত্ব যার অবাধ বিচরণ আর আচরণের অধিকার ছিল গ্রামের সীমানা পেরিয়ে গ্রামান্তরে। সে সুবাদে সুন্দরীর শোবার সুযোগ হয়েছিল স্টারের সাথে। কিন্তু আটার বস্তাতুল্য ওজনের স্টারকে তার পছন্দ হয়নি। এছাড়া কাম আর প্রেমের চেয়েও এখন তার অধিক প্রয়োজন গর্ভ ধারণের, যা এই ভারি বস্তু স্টারকে দিয়ে হয়নি। আর গর্ভধারণের প্রয়োজনটাও সুন্দরী প্রকটভাবে অনুভব করে যখন জানতে পারে চিরশত্রু কৃষ্ণার সন্তানের কথা। নিজকে বন্ধ্যা ভাবতেই সে শিউরে ওঠে। কারণ এ অবস্থায় বংশ রক্ষার তাগিদে সরকারবাবু কৃষ্ণাকে ফিরিয়ে এনে সবকিছু তার হাতে তুলে দেবার ভীতি পেয়ে বসে সুন্দরীকে।

সুতরাং সুন্দরী মরিয়া হয়ে ওঠে এক নতুন সঙ্গীর জন্য। তার দরকার একজন উৎপাদনশীল শয্যাসঙ্গীর এবং দরকার জালিমকেই। কারণ জালিমই পেরেছিল তার চিরশত্রু কৃষ্ণাকে গর্ভবতী করতে। একদিন সুন্দরী ঠিকই জালিমের এলাকায় হাজির হয়। অভিনয় সুন্দরী জানে না, বিশেষ করে প্রেমের অভিনয়তো নয়ই। সুতরাং কালক্ষেপণ না করে অচিরেই স্থানীয় পার্কে তাদের দৈহিক মিলন, আর ভাবে এখন মা হতে শুধু অপেক্ষারই ব্যাপার মাত্র। স্বীয় পাশবিক ক্ষমতার মতো তার প্রজনন ক্ষমতার ওপরও তার ছিল অগাধ বিশ্বাস। এদিকে নিজের রাজত্ব ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে সুন্দরী নারাজ। সুতরাং ফিরে আসে নিজ আস্তানায়।

কয়েক মাস পরও যখন তার গর্ভবতীর কোনই নিশানা নাই, তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় নাগরের কাছে ফিরে যাবার। গেলবারে জালিম তার বাচ্চার কথা সুন্দরীকে জানায় নি। কিন্তু এবার সে সিদ্ধান্ত নিলো, না সব কিছুই তাকে জানাতে হবে, কারণ সুন্দরী যে এখন থাকতে আসছে। সে সুন্দরীকে এবার দেখামাত্র পরিষ্কার জানিয়ে দিল তার সন্তান আর দায়িত্বের কথা। প্রেমের জন্য বা যার জন্যই তুমি আসো না কেন, আমার সন্তানের প্রতি তোমার ন্যূনতম অত্যাচার, এমনকি অবহেলাও সহ্য করা যাবে না। সুন্দরী তাতেও রাজি। একবার নিজের সন্তান হলে, ছলেবলে কৌশলে নিজ সন্তানের স্থান সে ঠিকই করে নিতে পারবে সরকারবাবুর কাছে। সুতরাং লেজ গুটিয়ে জালিমকে জানিয়ে দেয় তার বশ্যতা স্বীকারের কথা। তারপরের কাজতো সোজা। কৃষ্ণার মতো একই ধারায় একই শয্যায় এবং অল্পদিনেই গর্ভধারণ। তবে এর জন্য জালিম আর সুন্দরীকে পরিশ্রম করতে হয়েছে প্রচুর। কারণ তাদের গোত্রে বেশ কিছু দিনে অনবরত এ ধরনের সেকেন্ড থেকে মিনিটের গোটা পঞ্চাশেক খেলা ছাড়া সন্তান লাভের সম্ভাবনার ইতিহাস নেহায়েতই কম। আর তারা দু’জনই বিপুল শক্তির অধিকারী বলে, কাজটি করতে তাদের তেমন বেগ পেতে হয় নি মোটেও। গর্ভবতী সুন্দরী এখন জালিমকে নিয়ে মহা খুশি। কিন্তু গোলমালটা অন্যখানে। গ্রামেই ছিল এক পরিত্যক্ত রাজ মন্দির যেখানে সুন্দরী মাঝে মাঝে যেত বিশ্রাম নিতে, কোন সময় যেত জালিমকে নিয়ে। আর স্টার তাকে একা পেলেই নিজের ভাগ ভোগ করে নিত। যদি দু’জন এক সাথে এসে যায় সে কথা ভেবে সুন্দরী ভয়ে শিউরে ওঠে। তখন যে বিশ্বাসঘাতকতা আর অজাচারের দায়ে দু’জনকেই হারাতে হবে, এমনকি হয়ত এত সাধের সন্তানকেও। সুতরাং সুন্দরী গাঢাকা দিয়ে দু’জনকেই এড়িয়ে চলে এবং এক সময় দু’জনকে ফাঁকি হারিয়ে যায় দু’জনেরই কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে। পোয়াতি সুন্দরী এত চড়াই উৎড়াই এর ফল সইতে পারে নি। অল্পদিনেই শুরু হল তার প্রসব বেদনা। আর আল্লাহর কি খেলা, কৃষ্ণার মতো একইভাবে চল্লিশ সপ্তাহের বেশ আগেই তিনটি সবল সুস্থ শিশু সন্তান প্রসব করে সুন্দরী। একই সাথে একাধিক সন্তান প্রসব কি সুন্দরীর বংশগত? জেনেটিক? তবে কৃষ্ণার চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী সুন্দরীকে মরতে হয় নি সন্তান প্রসবের পর।

তবু শেষ রক্ষা হল না। বাচ্চা তিনটিসহ সহসাই একদিন রাস্তায় স্টারের সাথে দেখা হয়ে যায় সুন্দরীর। বাচ্চার সামনেই স্টার সুন্দরীকে তার অভিলাষ জানালে সে প্রথমবারের মতো প্রতিবাদ করে রুখে দাঁড়ায় ঠিক বাঘিনী রূপে। ফলে অবধারিত মল্লযুদ্ধ, যা দেখে বনের বাঁদুর পর্যন্ত জান নিয়ে পালায়, আর বাঁদর নিরাপদ দূরত্ব থেকে তামাশা দেখে। আর সে যুদ্ধে দারুণভাবে আঘাত পায় সুন্দরী। বাঁ পায়ে দারুণ ব্যথায় তার হাঁটা মুস্কিল হয়ে পড়ে। যুদ্ধ ক্ষণস্থায়ী হলেও তার তিনটি বাচ্চাই ভয়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায় স্টারের নাগালের বাইরে। নিজের প্রাথমিক চিকিৎসা নিজেই করে সুন্দরী তাকিয়ে দেখে তার বাচ্চা নেই। দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে তখন বাকি ব্যথাকে উপেক্ষা করে খুঁজতে থাকে বাচ্চাদেরকে চারিদিকে। বেপরোয়া হয়ে নাওয়া—খাওয়া ছেড়ে দিয়ে সে তার বাচ্চাকে খুঁজতে থাকে পাগলের মতো। চার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে সে চিৎকার করে ডাকে তার সোহাগের ধনকে-যার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে যায় আরও দূরে, কিন্তু পৌঁছে না শুধু ইপ্সিত শিশুর কর্ণ কুহরে। দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার তল্লাশির পর নিরাশ হয়ে যখন স্টারকে খুনির রায় দিয়ে বসে, ঠিক তখনই আল্লাহ্র অসীম দয়ায় সুন্দরী তার সন্তানদেরকে খুঁজে পায় সম্পূর্ণ সুস্থ আর অক্ষত অবস্থায়, জঙ্গলের পশ্চিম মাথায়। এ দু’দিন সরকার বাবুর ভাড়াটে লোক সুন্দরী পরিবারের খোঁজ রেখেছে ভিডিও ছবি সহকারে। আর সে অনুযায়ী তার সামন্তরা আড়াল থেকে অসহায় শিশুদেরকে নিয়মিত খাবার দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। তবে সুন্দরীর যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে, এ এলাকায় থাকা আর নিরাপদ নয়। কিছুদিন বিশ্রামের পর খোঁড়া পা নিয়ে সে পরিবারসহ যাত্রা করে অচেনা পথে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু সে জানতো না সামনে তার জন্য আরও কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। ক্লান্ত সুন্দরী টেরও পায়নি কখন সে হাঁটতে হাঁটতে কয়লা খনি শ্রমিকের ব্যস্ত লোকালয়ে ঢুকে গেছে। এখানে তার মতো কেউ নেই যে তার কাছে কিছু আশা করা যায়। ভুল। আদম গোত্রের লোকেরা তাকে দেখেই খবর পাঠায় সরকারের বন ও পশু সম্পদ দফতরে। মুহূর্তেই সরকারি লোক এসে সুন্দরীকে অজ্ঞান করে খাঁচায় পুরে ট্রাকের উপর তুলে দেয়। সরকারের হিসাব অনুযায়ী যে জঙ্গলে বাঘিনীর সংখ্যা কম, সে জঙ্গল বরাদ্দ হোল সুন্দরীর জন্য। জ্ঞান ফিরলে সুন্দরী বুঝতে পারে যে সন্তানের জন্য সে সবাইকে নিয়ে দেশান্তর হতে চেয়েছিল, সে সন্তান থেকেই সে চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে গেল এখন। পুনর্বাসনের এক বছর পর সরকারের লোকেরা সুন্দরীকে আর দেখতে পায়নি। বহু তল্লাশির পর অবশেষে সুন্দরীর লাশটি তারা খুঁজে পায়। ময়না তদন্তে তার মৃত্যুর কারণকে ‘স্বাভাবিক কারণ’ দেখানো হয়। কারণ কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ডিপ্রেশন এর প্রমাণ বা ছাপকে আবিষ্কার করার জন্য সিটি বা এমআরআই এর মতো কোনো যন্ত্র এখনো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারে নি। তবে শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে যথাযথ মর্যাদার সাথে হিন্দু প্রথায় সুন্দরীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

এদিকে সুন্দরীর অবর্তমানে পরিত্যক্ত রাজত্বে ফিরে আসে সুন্দরীর ভিটেতাড়িত বোন কৃষ্ণা। আসলে না, কৃষ্ণাতো ইন্তেকাল করেছিল সন্তান প্রসবের পরেই, সে ছিল আসলে কৃষ্ণার যমজ বোন। আর তারা যেহেতু যমজই আর গল্প ও শেষ পর্যায়েই, তখন আর নতুন নাম খোঁজার কি দরকার? কৃষ্ণা তো রাজত্ব পেল, এখন যে সঙ্গীর দরকার। সঙ্গী পাওয়াও অবশ্য তেমন দুরূহ কোনো কাজ কিছু নয়। নিদেনপক্ষে তার পুরাতন ভাতার স্টারতো ছিলই। কিন্তু না, সে সেপথে গেল না। মৃত বোন সুন্দরীর প্রতি কৃষ্ণার প্রচ- রাগ আর প্রতিহিংসা এখনো জ্বলন্ত যার প্রতিশোধ বাস্তবায়নে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই কৃষ্ণা খুঁজে বের করে জালিমকে। অবশ্য জালিমের পিতৃ পরায়ণতা ছিল একটা অতিরিক্ত মুনাফা। আর অজাচারের কথা? সে তো তাদের মাও শুয়েছিল এই জালিমেরই বিছানায়!

(National Geographic documentary, ‘Tiger’s Revenge’ অবলম্বনে। বাঘের নাম, তাদের জীবন যাত্রা সবই ডকুমেন্টারি থেকে নেয়া। বনের রানী সুন্দরী নামের ৩০০ পাউন্ডের এই বাঘিনী ৩৫ মেইল বেগে দৌড়াতে পারে। এটি হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বেশি আলোক চিত্রায়িত বাঘিনী। স্টারের ওজন ৫০০ পাউন্ড আর দর্শনীয় জালিম হচ্ছে ১/৪ মেট্রিক টন। ভারতের জাতীয় পশু বাঘের ৯৫ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে গত শতাব্দীতে। জন্মের পর অর্ধেক বাচ্চা মারা যায় প্রথম জন্মদিনের আগেই। আলোচিত এলাকাটি এখন জাতীয় পার্কের অংশ বিশেষ, যেখানে জনসাধারণের সীমিত প্রবেশাধিকার এবং বছরের ৩ মাসে প্রবেশ একেবারেই নিষেধ।)

menu
menu