দহন

খুনটা অবশেষে করেই ফেলল বিশে। করার আগে অবশ্য অনেকবার ভেবেছে।গত সপ্তাহখানেক ধরে ভীষণ দোটানায় ছিল সে। একবার মনে করেছে ‘খুনটা করেই ফেলি’। পরক্ষণেই মনে হয়েছে না, এটা সম্ভব নয়। অন্য কেউ হলে হয়তো খুন করার আগে এতবার ভাবত না। কিন্তু বিশে ভেবেছে। ভাবার অবশ্য কারণও আছে। যাকে সে খুন করেছে সে তার আশ্রয়দাতা। আবার অন্নদাতাও বটে।

তখন কতই বা বয়স বিশের। বড়জোর চৌদ্দ। মুখে দাড়ি গোঁফের হালকা একটা রেখা সদ্যই উঁকি দিতে শুরু করেছে। সেই বয়সে আচমকাই বছর খানেকের ব্যবধানে বাপ মা কে হারিয়ে দূর সম্পর্কের এক মামার হাত ধরে শশধর মন্ডল বাড়িতে এসে উঠেছিল। কত বড়ো বাড়ি। কতগুলো ঘর। বিরাট উঠোন। আম, নারকেলের গাছ। মামা বলেছিল, ‘মন্ডল মশাই, ছেলেটা বড্ড ভালো—শিখিয়ে পড়িয়ে নিলে সব কাজ করে দিতে পারবে। আপনার কাছে ওকে এনেছি বড়ো আশা করে। বাপ-মাকে হারিয়ে বড়ো অতলান্তে পড়েছে ছেলেটা।’

শশধর মন্ডলের তখন মাঝ বয়স। এক মাথা ঝাকড়া চুল। চোখে রক্তজবার চাউনি। শরীরে শত ঘোড়ার তেজ। বিশের সারা শরীরে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলেছিলেন, ‘সবই তো বুঝলাম। কিন্তু বয়স যে বড্ড কম।’

মামা বলেছিল, ’কম তো কী, গায় গতরে কিন্তু শক্তি আছে।’মাথা নেড়েছিলেন মন্ডল মশাই, ’দেখে অবশ্য সেরকমই মনে হয়। তা কাজ টাজের কোনো অভিজ্ঞতা আছে কী?’ ‘অভিজ্ঞতার কী আছে, দু'দিনেই সব শিখে নেবে। কীরে পারবি নে—মাথা নেড়েছিল বিশে, ‘হঃ, পারব’ শশধর মন্ডলের ছিল ছিলিম খাওয়ার অভ্যেস। গদিখাটে বসে আয়েশ করে ছিলিমে টান দিতে দিতে বিশের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তা হ্যাঁ রে ছেলে তোর নামটা যেন কী?"

‘এজ্ঞে বিশে। বিশ্বপতি দাস।’
‘বেশ, বেশ।তা বাড়ি কোথা?’
‘ছেল কানাইখালি। অহন নাই।’
‘নাই মানে? আস্ত একটা বাড়ি “নাই” হয়ে গেল?’

ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দিয়েছিল মামা। কানাইখালির গাঙ বাঁধে ছোট্ট একটা সংসার ছিল সুবল দাসের। সংসার মানে বাঁশের খুঁটির ওপরে খড়ের চালা তোলা ছোট্ট একটা কুঁড়ে। দিনরাত নদীর ওপর দিয়ে ছুটে আসা হাওয়া নিত্যদিন যাকে হুমকি দিয়ে যায়। যার ঝাপটায় চালার খড় উড়ে যায়। বেড়া ভাঙে। স্বামী-স্ত্রী টানা জাল নিয়ে নদীতে নামে। মীন ধরে সংসার চালায় ঘরে একমাত্র ছেলে। সেও নদীতে নামার অপেক্ষায়। বেশ ছিল সংসারটা। আচমকা কী যে হয়ে গেল। দিন চারেকের জ্বরে ভুগে এক সন্ধ্যায় মারা গেল সুবল দাস। মা, ছেলে বড্ড আতলান্তরে পড়ল। অগত্যা মায়ের সঙ্গে ছেলেও নেমে গেল জলে। কিন্তু ছেলের দুঃখের কপাল। বছর খানেক যেতে না যেতেই এক ভোরে ঘুম থেকে উঠে দ্যাখে পাশে মা নেই। নেই তো নেই। দিন ফুরিয়ে রাত হল। রাত ফুরিয়ে দিন। তারপরে আবারো রাত। মা আর ফিরলো না। ছেলের সামনে তখন শূন্যতা ছাড়া কিছুই নেই। আর আছে এক পেট খিদে। রাক্ষুসি খিদেটা সব সময় তাকেই গিলে খেতে চায়। ছোট্ট ছেলেটাকে দেখে কারও করুণা হলে চাট্টি দিলে খাওয়া হতো। না দিলে নয়। তবু চলছিল। কিন্তু হঠাৎ এক সন্ধেয় ভয়ঙ্কর এক কালবৈশাখীর ঝড় এসে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিতেই পথে নামলো ছেলে। গিয়ে উঠলো এই মামার কাছে। তারপরেই সব শুনে মাথা নেড়েছিলেন মন্ডল, ‘বড়োই দুঃখের কাহিনি। তা কী আর করা। থাক। কাজ করবে। থাকবে। খাবে। তবে হ্যাঁ, মাস ছয়েক কোনো বেতন টেতন দিতে পারব না কিন্তু। ততদিনে কাজ টাজ ভালো করে শিখুক।তারপর বুঝে শুনে একটা কিছু—’ শশধর মন্ডলের কথা শেষ হওয়ার আগেই মামা বলেছিল, ‘টাকা কড়ি সে যখন আপনার যা মনে হয় দেবেন। আগে তো ছেলেটা খেয়ে বাঁচুক।’

এ কী আর আজকের কথা। সেই থেকে এ সংসারে আছে বিশে।তার খাওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়েছে। থাকার একটা জায়গা হয়েছে। জীবনের একটা নিরাপত্তা হয়েছে। কতগুলো বছর যে হয়ে গেল তা বিশের হিসেব নেই। তবে সে আর এখন সেই ছোটটি নেই। পরিপূর্ণ একজন যুবক সে। তাগড়া জোয়ান। শরীরে যার হাজারো হাতির শক্তি। সারাদিন এত খেটেও ক্লান্তি হয় না। মন্ডল গিন্নি বলেন, ‘তুই কী মানুষ, না অন্য কিছু রে বিশে? ’—বিশে হাসে, ‘ক্যান মা?’

‘কাজ তো মানষেই করে মা। যারা আলসে ভূত তারাই খালি শুয়ে বস্যে কাটায়।’

উমাতারা বেশ স্নেহ করেন বিশেকে। ছেলেপুলে নেই। কেবল দু'টি মেয়ে তার। তাদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়ি ভর্তি এত যে মানুষ তাও বড়ো শূন্য শূন্য লাগে উমাতারার। তবে বিশে যখন সামনে এসে দাঁড়ায়, ‘মা’ বলে ডাকে, কোথায় যেন আপনজনের একটা ছোঁয়া অনুভব করেন তিনি। বুকের গভীরে জল তরঙ্গের একটা আওয়াজ শুনতে পান। বিশেও নিজেকে আজকাল এ বাড়িরই একজন মনে করে। এ বাড়িতে তার নিজস্ব একখানি থাকার ঘরও আছে। যদিও সে ঘরে তার থাকাই হয় না বলতে গেলে। সে ভেড়ি পাহারা দেয়। ভেড়িবাঁধের টঙঘরে শোয়। ঘুমোয়। আবার সেখানে বসেই সে আকাশ দ্যাখে। আকাশের চাঁদ-তারা দ্যাখে। ভেড়ির জলে চাঁদের আলোর সাঁতার দ্যাখে। আর বুক ভরে ভেজা হাওয়ায় শ্বাস নেয়। পাশাপাশি বেশ বড়ো বড়ো তিন তিনটে মেছোভেড়ির মালিক শশধর মন্ডল। সবটাই বাপকেলে সম্পত্তি তার। বিশে টঙ ঘরে বসে ভেড়ি পাহারা দেয়। মাছের খাবার দেয়। আবার ভেড়িবাঁধে এটা ওটা সবজি লাগায়। নিড়েন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে। এ সবের ফাঁকে যখনই সময় পায় মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে উমাতারার ফাই ফরমাশ খাটে। মন্ডল মশাই কিছু করতে বললে করে দেয়।

দক্ষিণের এ অঞ্চলে যেদিকেই চোখ যায় ছোট বড়ো অসংখ্য মেছোভেড়ির অস্তিত্ব। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট ছোট গ্রাম। ঘরে ঘরে খিদে আর বঞ্ছনা। বেশিরভাগ মানুষ এ সব ভেড়িতেই কাজ করে। দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পায়। এরা স্বপ্ন দ্যাখে না। দেখার আগেই ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে সব স্বপ্নই পালিয়ে যায়। এখানে হাওয়ায় ওড়ে মেছো গন্ধ। কত রকমের মাছ যে চাষ হয় এসব ভেড়িতে। বাগদা, গলদা, চামনে, হেড়ে, ভেটকি, পাবদা। আবার রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, সিলভার কার্পও আছে। মাছ চোরও আছে। রাতের আঁধারে সুযোগ পেলেই ভেড়িতে জাল ফ্যালে। হাঁড়ি ভর্তি করে তুলে নেয় মাছ। তারপর সেই মাছ চলে যায় দূরের কোনো আড়তে। সে জন্যে প্রত্যেক ভেড়ি মালিক ভেড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য আলাদা লোক রাখে। যারা খুব বিশ্বস্ত হয়। না ঘুমিয়ে ঠিকমতো পাহারা দেয়। সাত ব্যাটারি টর্চের জোরালো আলো ফেলে সারারাত ঘুরে বেড়ায় পাড় দিয়ে। বিশেও তেমনই একজন পাহারাদার। সে সারারাত টঙ ঘরে জেগে বসে থাকে। মাঝে মাঝে টঙ থেকে নেমে ঘুরে আসে ভেড়িগুলোর পাড় দিয়ে। কখনো কোনো ব্যাঙ যদি পাড় থেকে লাফিয়ে জলে নামে, তাতেও তার কান দু'টো সতর্ক হয়ে ওঠে। জলের ওপর টর্চের আলো ফেললে যখন লক্ষ চুনি জ্বলে ওঠে তখন বেশ লাগে বিশের। মনে হয় সে যেন এই সাত রাজার ধনের পাহারাদার। আকাশের চাঁদ তারারাও ভেড়ির জলে নেমে সাঁতরে বেড়ায় যেন তাকে খুশি করতেই। সে খুশি হয়। সন্ধ্যে থেকে ভোর—এসব দেখতে দেখতেই কেটে যায় বিশের।

প্রতিদিন রাত্রি একটু গভীর হলে শশধর মন্ডল একবার করে সবগুলো ভেড়ি ঘুরে যান। তখন অবশ্য মানুষটা মদের নেশায় চুর। মুখে ভুর ভুর করে মোদো গন্ধ। হাত-পা টলতে টলতে টঙের কাছে এসে হাঁক ছাড়েন,

‘কইরে বিশে, ঘুমোলি নাকি?’
টঙ থেকে ঝুপ করে নেমে এসে সামনে দাঁড়ায় বিশে,
‘না বাবু, আমার কী ঘুমোলি চলে’
মন্ডল খুশি হন। বলেন,

‘বেশ, বেশ। ঠিক মতন পাহারা দিস বাপ। চাদ্দিকে মাছ চোরের উৎপাত বড্ড বেড়েছে রে।’

মন্ডলকে নিয়ে ঘিরে ঘুরে চারপাশ দ্যাখায় বিশে। অতগুলো ভেড়ির অতগুলো পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন মন্ডল মশাই। পা টেনে টেনে চলতে চলতে বাড়ির পথ ধরেন। বিশে বলে,

‘আপনেরে এগোয়ে দেই বাবু।’
মন্ডল মাথা নাড়েন, ‘না রে,একলাই চলে যেতে পারব। তুই না থাকলে সেই সুযোগে যদি’

কথা শেষ করেন না মন্ডল মশাই। গুনগুনিয়ে কিছু একটা গানের সুর ধরেন। তবে কী সুর, কী তাল, কী শব্দ—কিছুই বুঝতে পারে না বিশে। সে তাকিয়ে থাকে মন্ডলের চলে যাওয়া পথের দিকে। পথ তো নয়, ভেড়িবাঁধ। বাঁধের চারপাশ থেকে ঘিরে আসা অন্ধকারে এক সময় মন্ডল হারিয়ে গেলে ফের টঙ এ এসে বসে বিশে। কোনোদিন ইচ্ছে হলে গান গায়। ইচ্ছে হলে আকাশ দ্যাখে। ইচ্ছে হলে আবার বাতাসে কান পেতে জলপোকাদের ডাক শোনে। মন্ডলের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে ওঠে তার।

সেই মন্ডলকেই আজ খুন করলো বিশে। এছাড়া আর কোনো উপায়ই তার ছিল না। তবুও সে ভেবেছিল। অনেক অনেক ভেবেছিল। ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে ঘুম টুম সব হারিয়ে গিয়েছিল তার। খিদে তৃষ্ণার অনুভূতিও তেমন ছিল না। উমাতারা যেদিন তার হাত দু'টো ধরে বলেছিলেন,

‘আমায় বাঁচা বিশে’ 

সেদিন নিজেকে বড়ো অসহায় মনে হয়েছিল তার। একরাশ অসহায় দৃষ্টি নিয়ে উমাতারার দিকে তাকিয়ে বলেছিল,
‘আমি কী কত্তি পারি মা?’
উমাতারা ভিজে যাওয়া চোখে তাকিয়েছিলেন বিশের দিকে। বলেছিলেন,

‘যা হোক একটা কিছু’
‘কিন্তু মা— ’
‘এই শেষ বয়সে এসে সতীনের সংসার করতে কারও ভালো লাগে, বল? তার ওপর অমন একটা খারাপ মেয়েছেলে। আমি জানি তোর বাবু প্রতি রাতে ওই বিধবার ঘরে যায়। সংসারের দিকে তাকিয়ে সব জেনেও আমি চুপ করে ছিলাম। এখন তাকে বিয়ে করে ঘরে এনে তুলতে চাইছে। আমার নিজে হাতে সাজানো সংসার। একে আমি অন্যের হাতে কী করে তুলে দিই বল তো?’
মুখ থেকে সমস্ত কথারা বুঝি হারিয়ে গিয়েছিল বিশের। চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল সে। উমাতারা বলেছিলেন,
‘পেটে যদি কোনো ছেলে ধরতাম তাহলে তাকেই বলতাম। তা তো নেই। কিন্তু তুই তো আছিস বাবা। সেই ছোট থেকে ছেলের মতোই ভালোবেসেছি তোকে। তাই—’

গাঢ় অন্ধকারের বুক চিরে সরু একফালি আলোর রেখার মতো ভাবনাটা উঁকি দিয়ে গিয়েছিল তখনই। তারপর থেকে সাত সাতটা দিন অনেক ভেবেছে বিশে। শেষে কাল রাতেই নিয়ে ফেলেছিল সিদ্ধান্তটা।

সন্ধে ফুরিয়ে রাত্রি গাঢ় হতে শুরু করলে শশধর মন্ডল যখন টলোমলো পায়ে টঙঘরের পাশে দাঁড়িয়ে হাঁক দিয়েছিলেন,
‘কইরে বিশে, ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?’
তখনই রক্তটা চিড়িক দিয়ে উঠেছিল মাথায়। তবু গলাটাকে স্বাভাবিক রেখে বলেছিল,
‘না বাবু, আমার কী ঘুমোলি চলে।’
উত্তর শুনে প্রতিদিনের মতো আজও প্রসন্ন হয়েছিলেন মন্ডল মশাই। বলেছিলেন,
‘বেশ, বেশ। সত্যিই তো, তুই ঘুমোলে আমার চলবে কেন? তুই জেগে থাকিস বলেই না নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি।’

আজ একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিলেন মন্ডল। দাঁড়িয়ে থাকতেও যেন কষ্ট হচ্ছিলো তার। পায়ে পায়ে বেঁধে পড়েই যাচ্ছিলেন বুঝি। ঝট করে দু'পা এগিয়ে ধরে ফেলেছিল বিশে। বলেছিল,
‘আস্তে বাবু।’

একটা ঘোর তখন পেয়ে বসেছে শশধর মন্ডলকে। জীতেন ঢালির বিধবা বৌ নয়নতারা আজ একটু বেশিই সোহাগ দিয়ে ফেলেছে তাকে। জড়ানো গলায় বলেছিলেন,

‘কেন রে, লাগলো নাকি তোর?’
‘উঁহু।’
‘তবে চল চাদ্দিকটা একবার ঘুরে দেখি।’

সুযোগটা পেয়ে যেতেই আর দেরি করেনি বিশে। হাঁটতে হাঁটতে মন্ডলকে নিয়ে গিয়েছিল তিন নম্বর ভেড়ির একেবারে শেষ মাথায়। নির্জনতা সেখানে আঁধারের সঙ্গে আঠার মতো লেগে আছে। কৃষ্ণপক্ষের রাত গুলে গিয়েছে ভেড়ির জলে। চারপাশে কেবল বিচিত্র স্বরে জলপোকা আর ঝিঁঝিঁদের ডাক। বাতাসের গায়ে জল থেকে উঠে আসা আঁশটে গন্ধ। তারপর পেছন থেকে আচমকাই মন্ডলকে একটা ধাক্কা। জলের ভেতরে একটু ঝটাপটি। তারপর ফের নৈঃশব্দ্য।

হ্যাঁ, একটু আগে ঠিক এভাবেই শশধর মন্ডলকে খুন করেছে বিশে। আর খুনটা করার পর থেকে এতটুকু স্বস্তি নেই তার। একটা প্রচণ্ড রকমের অস্থিরতা তাকে পাগল করে দিচ্ছে। শরীরে এক তীব্র দহনের আঁচ। সবকিছু জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছে যেন। এই অবস্থাতেই হাঁটতে হাঁটতে টঙঘরের কাছে এসে দাঁড়ালো বিশে। তারপর নেমে গেল জলে ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে চাইল শরীরের আগুন। কিন্তু কই, কিছুতেই তো কমছে না জ্বলন। উল্টে সমগ্র ভেড়িটাকেই মনে হচ্ছে যেন তরল আগুনে ভর্তি এক বিরট পাত্র। চারপাশে আগুনের কোলাহল। এবার বুঝি পুড়ে শেষ হয়ে যাবে সে।

এতক্ষণে প্রচণ্ড রকমের একটা ভয় তাকে ঘিরে ধরতে শুরু করলে জল থেকে উঠে উমাতারার উদ্দেশ্য ছুটতে লাগলো সে।


গৌতম বিশ্বাস কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক, ভারত

menu
menu