চন্দন চৌধুরীর অণুগল্প

পানপাত্র ও স্বপ্ন

পানশালায় পানপাত্র সামনে নিয়ে বসে আছে দুই বন্ধু। একজন পানপাত্রটাকে ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরয়ে দেখছিল। অন্য বন্ধু বলল, ‘পানপাত্রকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখার কী আছে!’ প্রথম বন্ধু বলল, ‘এই পানপাত্রে কী খেতে আসি জানিস?’ দ্বিতীয় বন্ধু জানতে চাইল, ‘কী?’ প্রথম জন বলল, ‘আমার অনেক স্বপ্ন ছিল, ইচ্ছে ছিল। সেগুলোর একটাও আমি পূরণ করতে পারিনি। এই পানপাত্রের পানীয়তে আমি সেগুলো দেখতে পাই। আর আমার সেই স্বপ্নগুলোকে ইচ্ছেগুলোকে খেয়ে ফেলি। আর কিছু না, নিজের স্বপ্ন আর ইচ্ছেগুলোকে খেতে আসি এখানে।’

বিশ্রাম ও জীবন

রাস্তার মোড়ে দুই পথিকের দেখা। একজন গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। দেখে অন্যজন বললেন, ‘এভাবে বসে আছেন যে?’ দ্বিতীয় জন বললেন, ‘কোথায় বসে আছি?’ তখন প্রথম জন বললেন, ‘বসে বসে ছায়া খাচ্ছেন আর বলছেন কোথায় বসে আছি!’ দ্বিতীয়জন বললেন, ‘জন্মের পরই মানুষ হাঁটতে শুরু করে। আর থামে না। একবারই শুধু থামে। বিশ্রাম নেওয়াকে বসে থাকা বলে না।’

প্রকাশকের ডায়েরি

একজন লোক প্রকাশনা হাউজে এলেন। বেশ কয়েকটি বই খুঁটে খুঁটে দেখলেন। এরপর প্রকাশকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার এখান থেকে একটা বই নিয়েছিলাম। দুটো বানান ভুল।’

প্রকাশক বললেন, ‘এজন্য আমি দুঃখিত।’

পাঠক বললেন, ‘দুঃখ করে তো আর দুটো বানান শুদ্ধ করা যাবে না। এজন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকা দরকার ছিল।’

প্রকাশক বললেন, ‘যথার্থ বলেছেন। তবে আমরা চেষ্টা করি নির্ভুল করতে। সবক্ষেত্রে পারি না।’

পাঠক জানতে চাইলেন, ‘আপনাদের বইয়ের প্রæফ দেখেন কে যে ভুল থাকে?’

এবার প্রকাশক বললেন, ‘শুধু এটা বলতে পারি ঈশ্বর প্রæফ দেখেন না।’

কবি কথা

এক ব্যক্তি এক কবিকে বললেন, ‘তুমি যে কবি আমার কাছে কীভাবে প্রমাণ করবে?’ কবি তখন একটা পাথরকে দেখিয়ে বললেন, ‘তুমি নিশ্চয়ই জানো না যে আমার কথারা এইসব পাথরের ভেতর দিয়েও হাঁটে!’

 

সাজগোছ

এক ব্যক্তির স্ত্রী ঘরদোর সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসতো। একদিন জানতে পারল তাদের বাসায় আত্মীয় বেড়াতে আসবে। সেদিন তো সাজগোছ আরও বেড়ে গেল। স্বামী বলল, ‘ওরা তো আসবে আগামীকাল, আজ থেকে বিছানা গুছিয়ে লাভ কি! রাতে তো ঘুমাতে হবে।’ স্ত্রী বলল, ‘তা ঘুমাওগে। আমার কাজ আমি করে রাখি।’ পরদিন আত্মীয় আসার আগে ঘরদোর বিছানাপাতির উপর আরও নজর দিল। বিকেলে এল আত্মীয়রা। এসে দেখল ঘরদোর পরিপাটি করে সাজানো। কিন্তু বাড়ির বৌয়ের মুখের অবস্থায়ই ভালো না। ঘরদোর পরিষ্কার করতে গিয়ে মুখে হালকা কালিঝুলি লেগে গেছে। এক আত্মীয় বলল, ‘তোমার মুখে কালি কেন?’ স্ত্রীটি খুব বিব্রত হলো। বলল, ‘কাজ করতে গিয়ে এই একটু লেগে গেছে মনে হয়।’ এই বলে লজ্জায় তাড়াতাড়ি ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল।

হাতির বুদ্ধি

কথা বলছিল হাতি আর পিঁপড়ে। পিঁপড়ে বলল, ‘চলো আমরা ভাবনা-ভাবনা খেলা খেলি।’ হাতি বলল, ‘এটা আবার কেমন খেলারে বাবা! বাপের জন্মে শুনিনি।’ পিঁপড়ে বলল, ‘শুনোনি দেখে কী হয়েছে! এই তো শুনলে! শোনো, তুমি একটা জিনিস ভাববে, সেটা আমিও ভাববো। তারপর আমি একটা জিনিস ভাববো, সেটা তুমিও ভাববে।’

হাতি বলল, ‘বাহ্ বেশ তো!’ পিঁপড়ে বলল, ‘তাহলে তুমি কিছু একটা ভাবো তারপর আমায় বলো, সে জিনিসটা আমিও ভাববো।’

হাতি কিছুক্ষণ ভেবে বলল, ‘মাথায় তো তেমন কিছু আসছে না। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি ভাবছি একটা সুন্দর কলাগাছ। কী চমৎকার সব কলা! আমি গাছসুদ্ধু খাচ্ছি।’ পিঁপড়া বলল, ‘বাহ, বেশ মজা। আমারও কলা খাওয়া হলো। এবার আমি ভাববো। আচ্ছা, আমি ভাবছি আমি তোমার মতো বিশাল হয়ে গেছি আর তুমি আমার মতো ছোট হয়ে গেছ।’ এই কথা শুনে হাতির চোখ লাল হলে গেল। বুঝতে পারল পিঁপড়ের মতলব। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিল হাতি। তারপর বলল, ‘খুবই সুন্দর। তোমাকে বড় দেখতে পারব, কিন্তু ছোট জিনিস তো আমি ভাবতেই পারি না। এই যেমন তোমাকেও ঠিক ভাবে আমি দেখি না। এত্ত ছোট তুমি!’ বুদ্ধিতে হাতিকে হারাতে না পেরে নিজে নিজে জ্বলতে লাগল পিঁপড়েটা। আর পিঁপড়েকে দেখে মনে মনে হাসল হাতি

menu
menu