কবি ও স্বর্ণ

পৃথিবীতে ঘটনার চেয়ে দুর্ঘটনা বেশি। কখন যে বাগানের ভেতর গাছের চারা গজিয়ে বড় হয় টের পাওয়া যায় না। বাবলা কাঁটা, মন কাঁটা, পিয়াল কাঁটা, হিজ কাঁটা আরও আছে। হঠাৎ একদিন বাবলার কাঁটা আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করে পদচুম্বনে। আপনি তো অবাক। জিজ্ঞেস করেন, বাবলা তুই! তুই টিনের চাল ছুঁয়ে আছিস? বাবলা তার মিহি পাতাহাসি বাতাসে দুলিয়ে আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলবে, আছি, কারও হৃদয়ে বিঁধতে হলে আমাকে ব্যবহার করবেন। মাথার উপরের টিনকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, বলতে পারবে না, কোনদিন তার শরীরে মরিচা বন্ধু হয়ে তাকে খেতে শুরু করেছে। টিন বলবে, এগুলো আমাদের ভালোবাসা। আমরা দুজন প্রাচীন পিরিতে বাঁধা। মরিচা আর টিনের পিরিতি। উদ্দেশ্য মাটি হবে। কী হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক। অথচ সত্য। আপনি শিরিষ কাগজ এনে, ঘষে মেজে, ব্রাশ দিয়ে রং মেরে ঝকঝকে তকতকে করে দিলেন। অথচ টিন হাসে। আপনার দীর্ঘজীবী লোভ দেখে ঢেউ কেলিয়ে হাসে। আপনি অনেকদিন বাঁচতে চান। সকলে চায়। তা না হলে পুরাতন টিনে রং করতে যাবেন কেন! একবারে ভেঙে না পড়লে, জরাজীর্ণে ন্যুজ্ব না করলে, কে বলে, এবার যেতে হবে, চিরতরে যেতে হবে। কোথায় যাবেন পরিষ্কার না। ভালো যে বাংলায় অনেক সুন্দর সুন্দর শব্দ রয়েছে, এর একটা ‘অনন্ত’। আমরা সকলে অনন্তের যাত্রী। কিন্তু যেতে রাজি না। স্বেচ্ছায় গেলে দরজা বন্ধ। ঝুলিয়ে রাখবে। কেউ জোর করে পাঠিয়ে দিলে প্রেরকের দণ্ড বিধানে কয়। কেউ একজন এসে নাকি নিয়ে যাবে। জোর করে নাকি কাঁধে হাত রেখে, কথা বলতে বলতে  নাকি কলার চেপে টানতে টানতে। ধরে নিলাম একবারে আলিঙ্গন করে নিয়ে যাবে। মা যেমন শিশুকে আলিঙ্গন করে স্নেহ পান করায় সেরকম করে। তবু যেতে মন চায় না। স্বজনদের নিকট ‘চলে যাওয়া’ একধরনের দুর্ঘটনা। বয়স যত হোক যেতে দিব না। কবিরা পৃথিবীর স্বজন। কবির সংজ্ঞা দিতে বসিনি। তবু কথার শরীর বেয়ে কথা চলে আসে লতার মতো। আবার বলি কবিরা পৃথিবীর স্বজন।

এক খণ্ড স্বর্ণ নিয়ে তিনি এসেছিলেন, কবি খুঁজতে। খাঁটি কবি পেলে স্বর্ণখণ্ড দিয়ে দিবেন। তিনি কে আমরা চিনি না, জানি না। গল্পের ‘তিনি’ এমনি হয়। হঠাৎ করে আসে। তিনি গাঙ্গুলীদের মাঠে গিয়ে দেখলেন কাঠের ঘোড়া ঘাস খায়। সহিসহীন ঘোড়া। সহিসকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি ঘোড়ার অর্থ করেন। ঘোড়ার অর্থ গতি। এই স্বর্ণ খণ্ডে গতি লুকিয়ে আছে। পরখ করা দরকার। তিন ধাপের পরীক্ষা। কবিরা নাকি সত্য থেকে তিন ধাপ দূরে থাকে। সত্য মিথ্যা জানি না। পরখ চাই পরখ। তিনি দুই বন্ধুকে পেয়ে গেলেন। মনে করলেন তারাই কবি। বাংলার বুকে জন্ম নিবে কবি হবে না তা হয় না। একদিনের জন্য হলেও কবি হতে বাধ্য। এতো যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন কী। তিনি বললেন, এই ঘোড়ার সহিস কোথায়? এক বন্ধু বলে, কাঠের ঘোড়ার সহিস থাকে না। অপর বন্ধু মাথা দুলিয়ে বুঝিয়ে দেয়, ‘কাঠের ঘোড়ার সহিস কেন হবে। ট্রয়ের ঘোড়ার কি সহিস ছিল?’ তাইতো ট্রয়বাসী যদি একবার ভাবত সহিসহীন কাঠের ঘোড়ার অন্য উদ্দেশ্য আছে তাহলে ট্রয় ধ্বংস হতো না। এমন করে যারা বলতে পারে তারা কবি ভিন্ন অন্য কিছু নয়। আর যদি অন্য কিছু হয় তাতে তার কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, তোমরা দুজনে বন্ধু। তোমাদের দুজনকে আমি একখণ্ড স্বর্ণ দেব। তোমরা ভাগ করে নিবে। এই নাও বলে, তিনি এক বন্ধুর হাতে স্বর্ণখণ্ডটি দিলেন। স্বর্ণখণ্ডটির স্পর্শে বন্ধুর শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। প্রথম বন্ধুর (স্বর্ণ পাওয়া বন্ধু) পায়ে গতি চলে আসে। বন্ধু বলে, চলো আমরা সেকরার দোকানে যাই অথবা স্বর্ণ দোকানে গিয়ে এর সুষ্ঠু সমাধান করি। দ্বিতীয় বন্ধু প্রথম বন্ধুর পায়ের তালে তাল রাখতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পারে না। প্রথম বন্ধু স্বর্ণ পেয়ে জোরে হাঁটে তারপর দৌড়ায়, অবশেষে জোরে দৌড়ায়। দ্বিতীয় বন্ধু স্বর্ণ না পেয়ে দৌড়ায়। একজন পেয়ে দৌড়ায় অপরজন না পেয়ে দৌড়ায়। একটু দূরে দাঁড়িয়ে  যে যুবক এই কাণ্ড দেখছিল এবার সেও দৌড়ায়। সে দৌড়ায়, কী ঘটছে তা দেখার জন্য। তারা দৌড়ায়। দৌড় বাড়ছে। স্বর্ণ পাওয়া বন্ধু কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর পেছনে ফিরে দুজন দেখে। সে ভাবে, ছিল একজন, দুজন হলো কী করে। মাংস আর শকুনেও প্রেম থাকে। একজন খেয়ে—খাদক হয়ে আনন্দ পায়, অপরজন খাদ্য হয়ে হজম হয়ে আনন্দ পায়। গাঙ্গুলী বাড়ি এলাকা থেকে তিনজন দৌড়ে অনেক দূর চলে আসে।

দৌড় চলছে। কী ঘটতে যাচ্ছে ভাবতে পারেন। ভাবুন। একেই সঙ্গে কী ঘটছে দেখুন। প্রথম বন্ধু—যে স্বর্ণ পাওয়া বন্ধু, দৌড়ে সদ্য নির্মিত এক দালানের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে। বুঝা যায়, প্রাপ্ত স্বর্ণ সে একা ভোগ করবে। সামান্য স্বর্ণের ভারে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্ব এক ফুৎকারে উবে যায়। সে শুধু সিঁড়ি বায় আর পেছনে তাকায়। লোভের সিঁড়ি ঘাড় চেপে ফিরে ফিরে দেখতে বাধ্য করে। অবশেষে সে ছাদে উঠে যায়। আপাতত বাঁচা গেল। ছাদের কার্নিশ ছুঁয়ে আম গাছের ডাল। কিছুটা ভরসা পাওয়া গেল। ডালের নিচে নিজেকে লুকানো গেল। কিন্তু ওরা তো আসছে। পরস্পর কথা বলতে বলতে আসছে। একজন অপরজনকে প্রশ্ন করছে।

: কেন দৌড়াচ্ছেন?
: আর বলবেন না, একখণ্ড স্বর্ণ দুজনে ভাগ করে নেব, অপরিচিত একজনে স্বর্ণ খণ্ডটি দিয়ে ভাগ করে নিতে বলেছে, কিন্তু দেখছেন, এভাবে কেও দৌড়ায়। ওর তো এমনিতে দৌড়ের অভ্যাস নেই। যেভাবে দৌড়াল, মুখ দিয়ে জিব বের হয়ে মরে যাবে সে।
: ও আপনার বন্ধু?
: অবশ্য বন্ধু। কিন্তু দুজন যেভাবে দৌড়ালাম বন্ধুত্ব আছে কি নেই বলতে পারব না।
: দৌড়ালে বন্ধুত্ব ভেঙে যায় বলছেন।
: বন্ধুত্ব কাচ পাত্র। প্রমাণ হলো। এতোদিন বিশ্বাস করিনি।
: চলেন আপনাকে আমি সাহায্য করব।

দুজনে ছাদে উঠে আসে। স্বর্ণ পাওয়া বন্ধু বলে, খবরদার নিকটে আসবি না। আমি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যাব। আমার মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী থাকবি। স্বর্ণ আমি দেব না। আমি হাত পেতে নিয়েছি। যে হাত পাতে তার কোনো সম্মান থাকে না সুতরাং আমি ফকির হয়ে এর মালিক বনেছি। এটা আমার...।

অপর দুইজন ক্রমশ এগিয়ে যেতে লাগল, আর তখনি ঘটল বিপত্তি।

স্বর্ণ পাওয়া বন্ধু ছাদ থেকে আম গাছের ডাল ধরে নিচে পড়ে গেল। পথের লোকজন থমকে গেল। একজন লোক কী কারণে উপর থেকে পড়ল। ছাদে অবস্থিত দুজন এখন পরস্পর বন্ধু। তারা জানে কেন সে লাফ দিয়েছে। ছাদের বন্ধু সদ্য পরিচয় হওয়া বন্ধুকে বলে, এখন কী করব? সদ্যবন্ধু বলে, আপনি ছাদ থেকে লক্ষ্য রাখুন কেউ তার শরীর হাতড়িয়ে স্বর্ণ খণ্ড নিয়ে যায় কিনা। আমি স্বর্ণখণ্ডটি নিয়ে উপরে উঠে আসছি। তারপর আমরা সেকরার দোকানে বা স্বর্ণ দোকানে গিয়ে স্বর্ণখণ্ডটি দুজনের মাঝে সমান দুভাগ করব। লক্ষ্য রাখুন লোকজন কিন্তু ভীড় করছে। লোকজন জানে না আপনার বন্ধুর সঙ্গে কী মূল্যবান বস্তু রয়েছে

সদ্যবন্ধু নিচে গিয়ে স্বর্ণ পাওয়া বন্ধুর শরীর হাতড়িয়ে স্বর্ণ খণ্ডটি নিয়ে হাঁটা শুরু করলে ছাদে আবস্থানকারী লোকটি (বন্ধু) চিৎকার দেয়। ‘আরে ভাই, চলে যাচ্ছেন, আপনার সঙ্গে এই ছিল কথা! জগতে কী বিশ্বাস বলতে কিছু নাই? আপনি উপরে উঠা ভুলে গেলেন। আমি যদি আপনাকে না বলতাম, আমার বন্ধুর কাছে স্বর্ণ আছে তখন আপনি কী করতেন! আমার ইচ্ছা হচ্ছে লাফ দিয়ে আপনার গর্দানে পড়ি। পড়ে আপনার ঘাড় মটকে দিয়ে স্বর্ণখণ্ডটি নিয়ে যাই। আরে এই ভাই, শুনছেন, আপনার ভিতর কি ন্যূনতম ইনসাফ নেই। ঠিক আছে আপনি নিয়ে যান। আপনার স্থলে আমি হলেও তাই করতাম। আমি নিশ্চয়ই আমগাছের ডাল ধরে লাফ দিতে আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতাম। আপনি দৌড়ান। আমি আপনার নাগাল পেলে হত্যা করব। আমি আসছি। জন্মরে পর পরই আমরা প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাই। আপনি কেন ছাদের উপরে ওঠার প্রতিশ্রুতির কথা মনে রাখবেন। যে বেশি ভুলতে পারে সে সুখি। আমি এখন সুখি হতে চাই না। আমি খুনি হতে চাই। আপনাকে খুন করে নিজে খুন হবো। আমি বুঝে গেছি এই জগতে কখনো কখনো খুন লুটপাট আবশ্যক হয়। আমার শরীর এমনভাবে কাঁপছে, আমি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে পারছি না। প্রচণ্ড ক্ষোভে হয়তো আমার হৃদপিণ্ড ফেটে যাবে। মরে গেলে প্রতিশোধহীন এক লোভীর মৃত্যুকাহিনি জগতের কেউ জানবে না। অভিশাপ দিলাম আপনার নিজের মৃত্যু না হলেও আপনার প্রিয় কোনো ব্যক্তি যেন অকালে মরে। যদিও জানি, অভিশাপ দেয়ার কোন অধিকার আমার নেই। কিন্তু স্বর্ণখণ্ডের লোভে আমি এতোটা উন্মাদ, ট্রয়ের কাঠের ঘোড়াটি যদি হতাম তাহলে চিৎকার করে ফেটে যেতাম। টিন হলে ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে গিয়ে আপনার গর্দান কেটে দিতাম। খেজুর গাছের কাঁটা দিয়ে আপনার দু চোখ তুলে ফেলতাম। বুঝতে পারছেন আমার কল্পনা শক্তি আমাকে গিলে ফেলেছে। আমার সমস্ত শরীর কাঁপছে। আমি সিঁড়ি বেয়ে নামতে পারছি না। আমি গড়িয়ে নামব। হামাগুঁড়ি দিয়ে নামব। আমার জিব বের হয়ে যাচ্ছে। সিমেন্ট বালি রড শ্রমিকের ঘাম ইত্যাদির সোয়াদ আমার জিবে লাগছে। লক্ষ কোটি টাকা দিলেও আমি এমন সোয়াদ গ্রহণ করতে রাজি হতাম না। আহা নিজের রক্ত নিজে গিলতে চেষ্টা করছি। আহা জীবন আহা...।’

সদ্যবন্ধু যুবক, স্বর্ণখণ্ডটি নিয়ে সোজা নিজ বাসায় চলে যায়। যুবক সন্ধ্যার পূর্বমুহূর্তে বাসায় পৌঁছে। যুবকের আনন্দ উজ্জ্বল মুখ দেখে স্ত্রী। আনন্দ রেখা চকচক করছে। স্ত্রী আনন্দের কারণ জানতে চাইলে যুবকের মুখ থেকে কোনো বাক্য সরে না। রাত গভীর হলে যুবক কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করেই স্ত্রীর হাতে স্বর্ণ খণ্ড দিয়ে বলে, তোমার জন্য এই উপহার। স্বর্ণখণ্ড দেখে স্ত্রী চিৎকার দিবে নাকি বেহুঁশ হবে বুঝে উঠতে পারে না। এমন একটি স্বর্ণখণ্ড কোথায় রাখবে ভাবতে গিয়ে একবার কাপড়ের স্তূপের ভেতর, আরেকবার আলমারির ভেতর আরেকবার শীতক যন্ত্রের ভেতর রাখলে যুবক বলে পাগল হলে চলবে না। এর মধ্যে পাগল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দরজা জানলা বন্ধ করে হাতে রাখো এবং দেখতে থাকো। দেখতে দেখতে স্থির হও।

কিন্তু যে বস্তুর মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বীজ ওপ্ত সে বস্তু কী করে যুবকের স্ত্রীকে শান্ত করবে বা স্থির করবে।

যুবকের স্ত্রী বলে, আমার পরিবার কত গরিব ছিল, আপনি দয়া করে আমাকে গ্রহণ করেছেন বলে আজ ধন্য হলাম। যুবক বলে, নিজেকে ছোট করো না। আমার ভালোবাসাকে অপমান করো না।

: কিন্তু আমি কি মিথ্যা বলছি, স্বর্ণ ছাড়া, অলংকার ছাড়া নারী জীবন অর্থহীন। নারীর সাধ আহ্লাদের ওপর লোভের আবরণ থাকে। জীবনের পরতে পরতে লোভ থাকে। আপনি আজ আমার লোভের আবরণ সরিয়ে দিয়ে নির্লজ্জ হতে অনুমতি দিলেন। আচ্ছা আমি তো নাকফুল পরতে পারব না। আমার নাকের ছিদ্র নেই। ঠিক আছে কালকে নাক ছিদ্র করে ফেলবো, কী বলেন? আপনি কথা বলছেন না কেন?
: ছিদ্র করো। নিজকে ছোট করো না।
: এইতো আপনি কত ভালো। কোত্থেকে আনলেন এই স্বর্ণখণ্ড? আহ! আপনি হয়তো সৎভাবেই এই স্বর্ণখণ্ডের মালিক হয়েছেন। ভাবতে আমার বুক ভরে যাচ্ছে। গলা থেকে বুক পর্যন্ত চেপ্টা একটা চেইন পরে আমি বাপের বাড়িতে যাব, মাকে দেখাব। আমার ছোট ভাইয়ের বউকে দেখাবো। পাশের বাড়ির সওদাগরের দ্বিতীয় বউকে দেখিয়ে তার মুখটা কীরকম ঘন কালো হলো দেখে এসে আপনাকে বলবো।
: ভারী চেইনকে বলে জড়োয়া।
: ঠিক বলেছেন। এখন বলতে লজ্জা নেই আমাদের তিন পুরুষের তিন জনমে জড়োয়া দেখে নাই। ইস আমার কী যে লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে আদিম পোসাকে আপনার নয়ন জুড়াই।
: স্থির হও। সমগ্র নারী জাতির নির্লজ্জতার দায়ভার পুরুষ জাতির ওপর বর্তায়। স্থির হও আবোল তাবোল বকো না। 
: আপনি আমাকে খুন না করলে আমি স্থির হতে পারব না। এক খণ্ড স্বর্ণের উত্তেজনা কী কম। নিশ্চয় আপনিও আমার অস্থিরতা উপভোগ করছেন। আপনি কয়েকটি অলংকারের নাম বলেন। শুনে আমার কান মন ঠান্ডা হোক। চুপ করে আছেন কেন! তাহলে আমি বলি। আমি এসব সওদাগরের দ্বিতীয় বউ থেকে শুনেছি। চরনচক্র, তিকলি, সাতনরিহার, বাজুবান্দ, রতনচূড়, বিছাহার, ঝুমকা, বালা, পায়েল... আর মনে পড়ছে না। ছোটলোক তো মনে থাকে না। 
: স্থির হও। ছোট বড় বলতে কিছু নেই।

‘আমি কী করে স্থির হবো’ এ কথা বলে যুবকের স্ত্রী এমন জোরে চিৎকার দেয়, দাঁড়ানো থেকে সে ধুম করে মেঝেতে পড়ে যায়। চোখ উল্টে দেয়। দাঁত খিচে। শরীরের কাঁপুনি শেষে থির হয়ে যায়।

যুবক মনে করে হুঁশ ফিরে আসবে। পাড়া প্রতিবেশী কাউকে সে ডেকে আনে না। যখন ডেকে আনে ততক্ষণে তার স্ত্রী পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
যুবক খবর পায় ছাদের উপর ফেলে আসা সেই লোকও মরে গেছে।
একদিনে তিন মৃত্যু। একখণ্ড স্বর্ণ। 
তারপর কে মরবে আমরা জানি না।

অনেকদিন পর যুবক তিনজনের মৃত্যু বিষয়ে লিখতে বসে। কিন্তু যুবক লিখতে পারে না। যতবার লিখতে চেষ্টা করে ততবার হাত কেঁপে ওঠে। যুবকের মনে হয় অসৎলোক কিছু লিখতে পারে না।

আরও অনেক বছর পরে একজন তিনি লিখতে বসেন। তিনি এখন লিখছেন সেই লোভের মর্সিয়া। তিনি পৃথিবীর স্বজন। তিনি এসেছেন এ শহরে শূন্য হাতে। এখনো শূন্য অবস্থায় আছেন তবে লিখছেন কবিতার অন্তঃস্থ নীরবতা।


কাজী মোহাম্মদ আলমগীর, কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক, বাংলাদেশ

menu
menu