গুচ্ছ কবিতা ♦ শিবলী মোকতাদির

ঝলক
সঞ্চিত নৈরাশ্যের মাঝে তুমি এলে বিদেশি ভ্রমর
নয়নের নিকট হতে আমাকে দেখাবে বলে
এই ফুল— কতটা লোকজ, কতটা গ্রামীণ!
আমি মাফলারে দীর্ঘায়িত শীত চাপা দিয়ে
সুন্দরের মর্মরিত অধিপাঠ করবো বলে;
তোমাকে বলেছি-ফুল নয়,
আমি ফলের গীতিময়তা ভালোবাসি।
কখনো অতিরঞ্জিত কখনোবা অতিমাত্রিক।
জানি, তবু তুমি ফুলের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।
বলিষ্ঠ ও স্বতন্ত্র পাপড়ির প্রত্যাশিত দুঃখ, শোক
জরা ও যন্ত্রণার আবেদন বয়ে আনবে।
আমার চোখ উঠবে ভিজে।
বাতাস বইবে তখনই হঠাৎ বেহুদা বসন্তের
ঝরে পড়বে পালক। স্থিরচিত্রে গজিয়ে উঠবে
দুরভিসন্ধির বল্লম হাতে জলে-স্থলে অসংখ্য প্রজাপতি
কতিপয় কীট ও পরাশ্রয়ী দুরাচার।
ফলে ছাতিম ফুলে মিশে যাবে যৌনতার ঘ্রাণ
এই নিয়ে শিশির আর সন্তানে চলবে কর্মহীন এক ক্যারিক্যাচাল।
তাদের ভেদ আর ভাষণে নরক হবে গুলজার।
আজানের পর আজান চলবে, সুতরাং শান্ত হলেও
বাহাস চলবে দেদারছে চলন্তকাল।
আমার বিবিধ কালের, সালের জমানো বিস্ময়গুলো
বিকিরণে বিস্তারিত হবে,
ভেঙে যাবে ব্যঞ্জনবর্ণের হাট।
গ্যাঁট খুলে গেলে তসবির দানাগুলো যেভাবে ছিটকে পড়ে
ব্যক্তিগত নির্মিত শৈলীর নীতি ও রীতির শীলিত স্বরূপ-
সেইভাবে অকারণে ফুল ও ফলের প্রভূত সংগ্রামে
অন্ধের আলেয়া নিয়ে আমাকে দেখতে হবে;
কেবলই পোড়া পোড়া চিত্রদাহ।
ফুল বলবে আমাকে ভাঙো। ফল বলবে আমাকে জোরো।
আমি কি আর আস্ত হবো না?
কুড়িয়ে পাওয়া যুদ্ধাহত কিছু বৈকালিক বাতাস
যদি আমার পক্ষে থাকে, শোনো—
স্বোপার্জিত অভিজ্ঞতায় শ্যাওলা বা পারদের ন্যায়
ফের আমি একত্রিত হবো।
ভ্রমর, ওগো ভ্রান্তবিলাসী ভ্রমর— স্বরবর্ণের দেশে গিয়ে
তুমি বরং ফুল ফোটানোর কৌশলটুকু খোলাসা করে দিয়ে এসো
তাতে চুমুর চক্রান্তে বাঁধা পক
সে দেশের প্রতিটি বালিকা ও বালক।
মিলনাকাঙ্ক্ষায় তাদের হাতে দিও, যদি পারো—
পাপড়ি ও পরাগের ঝলক।
শুষ্ক মম দিঘির জলে
দিঘির তলে জল নাহি আজ, বালির আনাগোনা
ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র গুল্ম-লতা পাতার নিচে সোনা
বর্ষা আসে গ্রীষ্ম শেষে চাঁদ ওঠে রাত্রিতে
আঁখির আগে হেমন্ত রয় শরৎ বিনা শীতে
অবশেষে বসন্তে হও গমনশীলা তুমি
সাক্ষী রেখে ঘাটের কাছে, আকাশ নিচে ভূমি
অধিকারের হাত বাড়ালে কুশল বিনিময়ে
পরিগ্রহে উপার্জিত প্রেম পড়ে যায় ভয়ে
আমার পায়ে নূপুর বাঁধা তোমার পায়ে ধ্বনি
ডুবতে-ডুবতে বালির মাঝে ডুবন্ত দুজন-ই
স্নিগ্ধ বাঁকা পরশ লাগে সোনার পরে রূপা
দিনহীনা সব রাত্রি সেথা খুলতে গিয়ে খোঁপা
একটি দুইটি বেণির টানে ডাক পাঠালো ফিঁকে
গুচ্ছ-গুচ্ছ বরের মেলা— আলোয় চতুর্দিকে
কৃতার্থ হও কীর্তি দেখে, গান শুনে সুর ধরি
বহে সোনা বালির নিচে তাম্রে-গড়া কড়ি
কড়ির গুণে কারণ থাকে, লক্ষ-হাজার-কোটি
বণিক আসে বায়ুর টানে-নর্তকী, নট-নটী
এত কিছুর মিশ্রণে তায় রূপের জলে রহি
ধরতে আসে আমায় মেরে রাজার অশ্বারোহী
কানকথা ০১
আসো এই পথে-
তালসহ সংগীতে, বিচূর্ণ পাপড়িতে ভর করে।
প্রতিনিধি প্রশ্ন তুললে
সূক্ষ্ম হাসিতে ইন্দ্রিয় ভরে দেবে
মোহর আর মোতি নিয়ে বসে আছি আমি
বাহিরে ভীষণ হাসিহায়েনার মতো হট্টগোল,
বুঝি-থেকে থেকে চালাকি চমকায়
ওহে ভারপ্রাপ্ত, সিপাহসালার,
দেখো তো, মরুযাত্রীদল উট ফেলে
হাতি ও ঘোড়া নিয়ে পালালো কোথায়?
গমন
চূড়ায় নেমেছে চাঁদ, মাহেন্দ্র বনের আশেপাশে
আর তুমি প্রত্নবিদ
রক্ষিত ধানের ব্যাকুল বাতাসে ভেসে এলে
যদি আসে গণিত শিক্ষিকা
নিবেদিত অন্ধকারে, সভ্যতার তৈজসপত্র ভেঙে যায়।
ভাসে যদি বেনজিন সংকেত
ধরো-নিমগ্ন গ্রামের পথে;
গার্হস্থ্যবিজ্ঞান ফেলে ছাত্রী চলে যায়।