গুচ্ছ কবিতা ।। শান্তনু পাত্র
অস্পৃশ্য
বৈশাখের বৃষ্টিদিন এখন অতীত
এখন ধু ধু বালির মরশুম
অভিমান ছুঁয়ে গেছে জল কিংবা
পাথর খাদান
বড়োই নোংরা, কালো পতঙ্গের দল
পাতাগুলো ছেঁদা করে গেছে
পতিতার মতো
যা কেউ ছুঁয়েও দেখছে না।
অস্পৃশ্য তো আমরা সকলেই, তবু
কেন যে,
ফুলের কাছে হেরে যাই বারবার!
রাইকিশোরী
অন্ধকার গাঢ় হলে গাছেরা শরীর খুলে রাখে
যেভাবে আলোর আড়ালে, আমিও খুলেছি বাস।
সমাগম হারিয়ে, কুঞ্জবন
ভাঙাচোরা সংসারে জড়িয়েছি।
বুঝিনি প্রেমের কৌশল
তোমার দূরন্ত অজুহাত,
শুধু কাঠ
কাণ্ডের গোপনে লুকানো ঈষৎ সবুজ
হয়তো খেয়াল করোনি।
ক্রমশ মিশে গেছি, ডুবে গেছি মুগ্ধতায়
সেই পুরনো অভ্যাস যদি ফিরে আসে
কী করে বোঝাই, ভ্রমে পুড়ে যাই
যেতে যেতে ফিরে দেখো অন্তত একবার
হে নাথ,
আমিও তো রাই হতে পারি।
জীবাশ্মজন্ম
ক্রমে সাঁঝবাতি ক্ষীণ হয়ে আসে
অন্ধকার জড়িয়ে আঁচলে
তুমি দাঁড়িয়ে থেকো পথের বাঁকে
যেখানে কোনো আলোর কুটিল সংকেত নেই
পূর্বজন্মের কথা মনে পড়ে
জীবাশ্মজন্মের কথা মনে পড়ে
আদিম প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে
কত ব্যথা, কত বেদনা আঁকা
যেন আলোর শোকে একটি পুকুর...
সবুজতা
মনের ভেতর আগলে রাখি, মেঘ।
মন্থন করা দুটি ক্লান্ত হাত, ন্যুব্জ
তারাটি নিভে গেলে, হিসাবের ভুল।
অযাচিত রাত্রি থেকে
হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়া যাক
যতসব অতর্কিত প্রশ্ন।
অকস্মাৎ বিদ্যুৎ চমকে ওঠে, গর্ভগৃহে।
সিঞ্চিত মাটি থেকে বুক ভরে,
মল্লারের সুর
প্রতিটি প্রশ্বাসে বুঝি,
এ জীবন কতটা সবুজ...
শান্তনু পাত্র কবি। ঢলকিশোর নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত বই : জাতিস্মর, জিরো গ্র্যাভিটি, সংসার পেতেছে প্রিয় গাছ, পাথরকুচি। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে থাকেন।