গুচ্ছ কবিতা ।। শেখর দেব

স্বনির্মিতি

উদ্দিষ্ট জীবন কবে কারা পায় বলো
স্বনির্মিত ফাঁদে পা আটকে গেলে 
বেদনা আক্রান্ত হতে লাগে না সময়
বিষণ্নতা ও বেদনা যুগপৎ খেলা করে
                    প্রতিযোগিতামূলক

কে কাকে দূষিত করে অভিযোগ বানে
কোথায় অসুখ পুষে রাখি সারাবেলা
কাকে বলো ডাকি বিষাদ সত্তার দেশে
কে কোথায় পীড়নের পীড়ায় আহত
কে সে মধ্যবর্তী দেহ ও মনের
ভাগ করে দেয় বিদুর ও বিষাদের সুরা

কার জন্য আকাল গচ্ছিত রাখি
কার জন্য বিদঘুটে বেলা
যদিও এসব সাময়িক বুদবুদ
তবুও সে কণা কেড়ে নেয় মনোযোগ 
আকাশে মেশার আগে প্রকট প্রধান
কালো মেঘ আসে মিশে যাবে বলে
                     আকাশের নীলে

বৃষ্টি

সাদা মেঘেদের ইচ্ছে হলো মাটি ছুঁবে। পাশ দিয়ে সশব্দে বিমান উড়ে যেতে দেখে, তার অবয়বে উড়ে উড়ে ভেসে যায় মেঘ। অবতরণরত বিমানের মতো ছুঁতে পারে না মাটি।

একঝাঁক পাখি উড়ে গেল পাশে। মেঘ পাখির আদল নিল। তবুও পেল না সে মাটির স্বাদ। উড়ে উড়ে ভাসতে ভাসতে ঘনকালো মেঘদের সাথে দেখা। সাদা মেঘদল জিজ্ঞেস করে—কেন তুমি এত কালো? উত্তরে বলে—কালোর কলঙ্ক ছুঁলে তবেই তো যাবে নিচে। মাটিতে কীভাবে যাবে যদি না-ঘটে অধঃপতন? 

সাদা মেঘদল কলঙ্ক কালোয় মিশে নিচে ঝরে গেল। সেই থেকে মেঘেদের অধঃপতনের নাম বৃষ্টি। 

ছেড়ে আসা মানুষ

জীবনে এসেছি ছেড়ে কত কিছু 
ছেড়েছি মাতৃজঠর জন্মের ক্ষণেই
তারপর অজস্র সময়, স্থান ও মানুষ 
ছেড়েছি প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে

বাবাকে এসেছি ছেড়ে জ্বলন্ত শ্মশানে 
ছেড়ে আসা মানে মুছে ফেলা নয়
কিছু অনির্বচনীয় অতুল ক্রন্দন শেষে 
বহমান যাত্রাপথে সঁপে দেয়া
বিরাট শিশুর খেলা, নতুন লীলাবিলাস

আমি ছেড়ে আসা অবুঝ মানুষ 
ছাড়ার বেদনা নিয়ে কুঁকড়ে থাকি না
একদিন দেহটাও ছেড়ে যেতে হবে 
ছাড়ার বেদনা জানি আনন্দ ভীষণ 
নতুন মুক্তির দিকে হাঁটা...

ঝরা পাতা

গাছ থেকে ঝরে গেলে পাতা
কখনো বলে না দায়ী হাওয়া
চেয়ে যদি ফিরে খালি হাতে
কিছু না কিছু তো হয় পাওয়া


শেখর দেব কবি এবং সম্পাদক। প্রকাশিত বই : প্রত্নচর্চার পাঠশালা, বাঞ্ছাকল্পতরু, কবিতার করিডোর, আরাধ্য আকাশবৃত্তি। সম্পাদিত ছোটকাগজ : শাঁখ। তিনি কর্মসূত্রে ভারতের দিল্লিতে থাকেন।

menu
menu