- গুচ্ছ কবিতা
অলঙ্কার
কিছু অলঙ্কার রেখে যাই,
আবার সময় পেলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখব!
কেউ কেউ কথা বলে! হাসি পায়!
কি দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে।
মাঝে মাঝে হাতে নেই, শ্বাসাঘাতে আয়ুষ্কাল মাপি
ভীষণ দুস্প্রাপ্য।
পরতে পরতে ক্ষুন্নিবৃত্তির আয়োজন
ধ্বনিত শব্দে উৎসারিত আকাঙ্ক্ষা দৃঢ়তা হানে
অলঙ্কার জীবন স্পর্শ চায়, একটি জীবন কাহিনি।
সাধারণ কথায় ভরে ওঠে আমাদের সুখ
বৃথাই মস্ত আয়োজন, মানুষের মুখ বড় পরশ পাথর।
অলঙ্কারে বাঁধা তার পুরোটা জীবন।
জুয়াড়ি
তিনজন জুয়াড়ি।
কেউ কারও চেয়ে কম নয়।
সবাই কিন্তু জুয়া খেলে। সেকথা আমরা নিজেরাই জানি কিন্তু সব সময় বলি না।
ফিওদর দস্তয়েভস্কি জুয়া খেলেন
নাম যশ আনন্দ ও অর্থযোগের জন্য। পোলিনা ধরা দেয় আবার হারিয়ে যায়।
আসল খেলাটা মগজে চলতেই থাকে আমৃত্যু।
দুঃখ শোক অপ্রাপ্তি কূটকৌশল কোন কিছুই তাকে সরিয়ে দিতে পারেনি খেলা থেকে।
যে খেলায় তিনি খ্যাতিমান চারশো বছর ধরে।
জুয়ায় নারী হচ্ছে শেষ অস্ত্র।
যে খেলায় নারী নিজে পণ্য সেটাতো আর আনন্দঘন হতে পারে না সবার কাছে?
দ্রৌপদী কার হবে? অথবা ডায়ানা কার সাথে শোবে, কঠিন সিদ্ধান্ত শুধু জুয়াতেই সম্ভব।
সৌভাগ্য হচ্ছে জুয়ার অর্জন।
মাধ্যম যাই হোক জুয়াড়ি তার মেধায় অনবরত চলিষ্ণু।
সুতরাং সে, তুমি এবং আমি, সবাই একরকম জুয়াই খেলছি।
কুশল জিজ্ঞাসা!
উৎসর্গ : কবি নাহিদা আশরাফী
অনেকদিন পর আবার দেখা হলো। দেখা হবে এটা আমি জানতাম। কারণ পৃথিবী গোল, আড়াই কোটি মানুষের এই ঢাকা শহর, শারীরিকভাবে যানজটের জন্য অনতিক্রম্য হলেও স্যাটেলাইট যুগে কোনো কিছুই দূরের নয়। সবকিছুই এখন নাগালের মধ্যে। হাসি ঠাট্টা ঝগড়া বিবাদ বোঝাপড়া আর মান অভিমান কোনোটাই বাদ যায় না। পৃথিবী বসবাসের জন্য বড় হচ্ছে আর আমাদের সম্পর্কগুলো প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ছোট হয়ে আসছে। এই রূপান্তর সময়ের পৃষ্ঠে ধাবমান হরিণ। ঘূর্ণায়মান সময় ও পৃথিবী তার সন্তানের খবর এখন নতুনভাবে লিপিবদ্ধ করছে। আস্তে আস্তে অবল ধবল সময় পার করে রুক্ষ পেলবতাহীন মর্মান্তিক এক জীবনের দিনলিপি গোনতে শেখায়। মানুষই অভিযোজনকে চালিত করে প্রকৃতি তার বাহন। রূঢ় তার কাছে কখনো অনায়াসে পরাভূত হয়নি। ব্যর্থতার গ্লানি অন্যসব প্রাণী বহন করলেও মানুষ কখনো ব্যর্থ হতে চায় না। আর এই চাওয়াকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাই। আর পশ্চাতে রেখে যাই তোমার আমার অবগাহন। তখন বলতে ইচ্ছে হয়—‘প্রেম পুরোনো হয় যত তার গভীরতা বাড়ে তত।’
প্রেমিকের কাছে প্রেমিকা কখনো পুরোনো হয় না
কল্পনাযোগ্য কোনো সুখ বা কষ্ট হাতে নেই অনেকদিন।
অনুভূতিগুলিও তীক্ষ্ণ নয় তৎক্ষণাৎ
সুতরাং তোমার বিচার দিয়ে আমি কি করবো এখন।
কোন কিছু নিজের করে পাইবার জন্য
মানুসিক জোর থাকা চাই!
তুমি এত দূরে থাকো, ক্লান্ত মলিন দিন যায়
বিতৃষ্ণা জমে থাকে সকল কাজে
গভীর আঁধার যা নিজেকেই সুখী করে!
কিছু কিছু বিষয় আছে যা শুধু নিজেকেই মানায়!
কাপালিক সুখ কিংবা গৃহবলিভুক উৎসব সকলের সমান নয়,
নূপুরের নিক্কন বা চুড়ির সিঞ্জন সবার কর্ণকুহরে সমান ঢেউ তোলে না,
দুষ্প্রাপ্য হাসি প্রথাগত নয় বা ভার্চুয়াল ছবি
ইচ্ছে মতো ভেবে ভেবে ক্রয়াদেশ দেবে আমাজনে।
হৃদয় সে তো সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেট, কীভাবে যে ডিমান্ড মেটাই
ব্যক্তিগত ঝুলি আজ ভীষণ নগণ্য, দেবী তুমি আমাকে সুখী করো।
প্রণয়ের বিস্তারিত গল্প, অনেকে আখ্যান বা উপন্যাসে বিস্তারিত করে,
আমার তেমন খোয়াব নেই,
তোমার গোপন হাসি, সারল্যে ভরা মুখ, ফ্ললেস দাঁত,
কার অধিকারে যাবে?
আমি ভেবে ভেবে হয়রান,
আমি তো তেমন প্রেমিক নই—ভীষণ কান্তিমান।
অথবা যে রকম—বই পুস্তক
টিভি, মঞ্চনাটক বা সিনেমায় দেখা যায় সুদর্শন পুরুষ,
মুহূর্তে চোখের তারায় খুশির জোয়ার ঢেকে আনে,
আমি তো তেমন নাগর নই ।
তবু অপলক চেয়ে থাকি তোমার চোখের তারায়
যা বয়ে আনে সম্পূর্ণ রঙিন নতুন এক গোপন জীবন।
যে জীবন প্রত্যেকের আছে, আবার নাই।
তাই প্রেমিকের কাছে প্রেমিকা কখনো পুরোনো হয় না।
সঙ্গনিরোধ
প্রথম যখন শব্দটা—
কারো মুখে শুনি, ভীষণ কৌতূহলী হয়েছিলাম।
শব্দটার মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা আছে সঙ্গমের।
এই করোনাকালে,
যে সব কথকথা আমাদরে মাঝে হাজির হয়েছে
তারমধ্যে সঙ্গনিরোধ ভয়াবহভাবে নির্মম ও হৃদয়হীন।
মানুষের বেঁচে থাকার জীবনচক্রে, সঙ্গ মিথস্ক্রিয়া থাকবে না, ভাবা যায়?
“প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না”
মহামারী শেষে এত এত শস্যে যখন উদরর্পূতি হবে
তারপর প্রাগতৈহাসিক ক্ষুধা আমাদের যুথবদ্ধ করতে চাইবে
এটাই স্বাভাবকি!
কিন্তু কিছুতেই আমরা আর স্বাভাবিক হতে পারবো না করোনা উত্তরকালে!
সঙ্গনিরোধের বেদনা নিয়ে প্রতিটি দিন অতিবাহিত করব।
মানুষ নামক প্রাণির প্রিয়তম বস্তু—শ্বাস
তার অপ্রিয়তম বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।
পৃথিবীর উষাকাল থেকে আজ অব্দি যত কাহিনি বলা হয়েছে
সেখানে অনেকগুলো আচরণের জন্য হাহাকার করবে মানুষ।
মানুষ কোনোদিন আর হাত ধরবে না মানুষের,
মানুষ কোনোদিন আর পাশাপাশি বসবে না মানুষের,
মানুষ কোনোদিন আর তার মানুষীর ভালোবাসা হাড়ে জড়িয়ে ধরবে না ।
পিতা তার সন্তানকে, মাতা তার শিশুকে, বোন তার ভাইকে শুধু ইশারায় ডাকবে,
বন্ধু নামক সর্ম্পক শুধু কাগজেই লেখা থাকবে, হবে না তার কোন যোগ্যতম বহিঃপ্রকাশ।
প্রিয়তম মানুষটির চুম্বন প্রিয়তমার কাছে কাছে হন্তারক মনে হবে!
এই সঙ্গনিরোধকাল।
তারপরও…
মানুষ আবার জেগে উঠবে, কাঁধে কাধ মিলিয়ে হাঁটবে একদিন
শুভবাদী স্বপ্নে বিভোর হবে।
যেকোনো বিপর্যয়কে মোকাবিলা করবে, নতুন পৃথিবীর গানে।
রোকন রেহান কবি। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রায় চারদশক ধরে কবিতা লিখেছেন। ২০২০ সালের বইমেলায় তার প্রথম কবিতার বই : আমিও তোমার মতো স্বপ্নভুক প্রকাশিত হয়। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন।