গুচ্ছ কবিতা ।। সাম্য রাইয়ান
বরই পাতার দেশ
অসুস্থ ভোরের মুখে দাঁড়িয়ে
ভাবি, কার কাছে যাবো!
বরই পাতার দেশ, উপ-দেশ
এ কেমন ঝরণা ধারা?
জ্বরের মূর্চ্ছনা! ভোর থেকে রাত।
কবর ভূমিতে দাঁড়িয়ে
থাকে, অন্ধকার ফলানো
চুপচাপ গাছ।
মরহুম পাতাগুলি শুধু
আটকে থাকে জীবনের ’পরে।
সহজ বেদনা নিয়ে
অর্ঘ্য ডালা জাগে
জ্বরের মৌনতা ভেদ করে।
ফুলকুমার
মানুষের প্রতি নিষ্ফল প্রণয়যান
এড়িয়ে চলেছি আমি। দেখেছি
সেসব জীবনের ব্যর্থ অভিযান।
মৃত্যুকে নেমন্তন্ন করে
দরজা আটকে বসে আছি।
চারিদিকে শুধু মানুষ।
বাড়ির মোড়ে মানুষ
বাজার ভর্তি মানুষ।
গোরস্থানে মানুষ আর
হাসপাতালগুলো ফাঁকা।
জ্বরের পাশ দিয়ে ফুলকুমার—
ভরা পূর্ণিমায় বাড়িতে থাকতে নেই।
অপার আকাশ
গণিত থেকে সূত্র তুলে নাও।
যেভাবে জল থেকে
তুলে নাও জলের টুকরো জল।
দূর থেকে ধেয়ে আসা
কুকুরের ডাক, জানে মিলিয়ে দিতে
কাছের কান্না
গাছের ব্যাকুলতা।
রোজার রাতে তোমার ঘুম আসে না।
অহেতুক পায়চারী করো। কেন,
তোমার ঘুম আসে না!
উঠোনে বেরিয়ে দেখ
অপার আকাশ।
ছাদের বাগানে দেখ
অহেতুক পাখি। ঘুমিয়ে পড়েছে যে,
শব্দ কোরো না তার নিকটবর্তী দেশে।
চোখের নিচে চাঁদ
পথ ভুলে যাই হলুদ বাতি দেখে।
রাত কি ফুরিয়ে যায়নি তবে!
শহর ঘুরে এলাম
কারও সাথে দেখা হয়নি।
যেমন হয় না তোমার সাথে
বহুদিন।
কার পাশে ঘুমিয়েছি
মনে থাকে না।
দাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে।
সামান্য বাতাসেই বুক কেঁপে ওঠে।
রাতের চোখ জুড়ে
হলুদ আলোর ঝড়।
জাগছে চোখের নিচে চাঁদ
আর ক্ষুধা বেড়ে যাচ্ছে।
নৈশসঙ্গী
উৎসর্গ: মাহদী, দুখাই, উদয়ন
আলোগুলো লাল আর নীল
টলমল করে
চারটে লোকের ভারে কেঁপে ওঠে
ইঞ্জিনের ঘোড়া।
টগবগিয়ে
কেঁপে কেঁপে ওঠে সমূহ পথের দিশা...
নেমে যাই
এই রাস্তা চলে গেছে
অধিকতর নিঃসঙ্গতার দিকে।
পুরনো শহরে বয়সী শামুক, হেঁটে যায়
অক্ষয় দাস লেন পেরিয়ে—
পকেটে মুদ্রা নাচে।
গলির মুখে নাচে পুলিশের গাড়ি।
বেদনাহত কোকের বোতল ছুঁয়ে
নৈশ বন্ধুর সাথে ট্রাফিক পেরিয়ে হাঁটি
অদেখা প্রতিবেশিনীর নিঃশ্বাস কাঁধে
টের পাই, আমরা তখন মেঘের ছায়ায়
অন্ধকার, বৃষ্টিহীন গ্র্যান্ড এরিয়ায়!
সাম্য রাইয়ান কবি ও সম্পাদক