তিনটি কবিতা ।। বিপুল অধিকারী
খেলাঘর
সবই তো বিফলে যায়,
দুঃখ করে কী হয়—
কত কত আড্ডা, আলাপ, সুত্র-পরিচয়,
ধূমায়িত চা-কফি, ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাশ সেলফি,
রাশি রাশি সিগ্রেট—সব!
সম্মোহন কেটে গেল হতবাক হয়ে দেখি,
পড়শি চেয়ারগুলো ভাঙাচোরা তিনপেয়ে এক টেবিল আঁকড়ে
ডুবে আছে অন্ধকারে—চাপ চাপ হাহাকার—আর
কী দারুণ থমকে আছে সময়,
মুখে বিস্মরণের স্নো-পাউডার ঘষে রাতচর দেমাগি মাগির ছদ্মবেশে!
বিন্দু বিন্দু ঘাম শুকায়ে যায়;
প্রতি সকালের স্নান বাশি শরীর থেকে মুছে ফ্যালে
প্রতারক রাতের দন্ত-নখর-বিদ্ধ দাগ;
সাবান-সোডায় কাচা রৌদ্রের গন্ধ মাখা সফেদ কাপড়ে
কত আর ঢেকে রাখা যায় দগদগে ক্ষত!
শ্যাম্পু করা চুল, সেও তো মূল্য হারায়—অমল-ধবল শুভ্রতায়!
মনে রেখো, একদিন
সবই বিফলে যায়—এই প্রেম, এই মিলন, বিরহ;
এই কাম-গন্ধ-সহবাস, এই মান-অভিমান—সুখবার্তা সকল!
দুঃখ করে কী হয়—
সবিতা, নোনতা গন্ধের মত আমি তোমাকে মনে রাখি
স্পর্শ করি ধুলাপত্রে অঙ্কিত তোমার দেহ—
নগ্নতার প্রাচুর্য, ক্ষমাহীন প্রশ্রয়;
তুমি তলপেটের স্লেটে বহন করো
এই অমোচনীয় প্রেমলিপি—
সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে সন্ধে, আর
জিভে স্বাদ না থাকার দীর্ঘরাত; অথচ
আমি বুঝি না তার এতটুকু, এই মোহন ক্ষয়—হাওয়ার পিঠে
মুহূর্তের চাবুক, শিরদাঁড়া বয়ে যাওয়া কালশিটে দাগ!
স্পর্শ করি কেবল সেসব ক্ষমাহীন প্রশ্রয়;
চকচকে তরবারির প্রণম্য প্রহর—অন্ধকারে ফুঁসে ওঠা
সে বিদ্যুৎ ঝলক; দমকা রক্তের দাঁত, সুতীব্র কামড়।
নোনতা গন্ধের মতো সারাদিন আমি তোমাকে মনে রাখি;
শীতল জলের মতো আকণ্ঠ আমি তোমাকে করি পান;
উষ্ণ পোশাকের মতো বরফদিনে আমি তোমাকে করি পরিধান;
সবিতা, তুমি তার সবটুকু বোঝ; শুধু
আমি বুঝি না তোমার যত গোপন সংঘাত,
বহু বৎসরের নির্বাচিত ক্ষয়—
কেবল স্পর্শ করি,
স্পর্শ করি তাবৎ নগ্নতার প্রাচুর্য;
অমিত সম্ভাবনার মুহুর্মুহু প্রলয়!
আবারও হেমন্ত
দ্বিধাহীন প্রান্তর—, সবিস্ময়ে পড়ে আছে
কার্তিকের মরা রোদ ক্লান্ত কুমিরের ধরনে;
ফ্যাকাসে, করুন!
একখানা চিল উড়ে উড়ে খুঁজে চলে
তারই নিরলম্ব ছায়া সকালের শিশির-জলে;
মাঠ-ঘাট, দূরের বাথান নড়ে ওঠে
শিরশির হাওয়ায়—, প্রকাশ্য হয়
দ্বিচক্রবালে তাহাদেরই মুগ্ধ প্রতিকৃতি, মুহূর্তের!
কানিবক এক একপায়ে তখনো দাঁড়ায়ে থাকে ঠায়
ঝাপসা হয়ে আসা জলশূন্য বিলের কিনারে;
দুই চোখ তার অবিচল—, লক্ষ্য-স্থির বর্শার ফলার মতন;
আর ধারালো!
দ্বিধাহীন প্রান্তর—, হেমন্তের খাঁ খাঁ শূন্যতা নিয়ে
কৃষাণীর খলায় পৌঁছে দিচ্ছে রাশি রাশি বিস্ময়—, মগ্নসচ্ছলতা!
বিপুল অধিকারী, কবি, বাংলাদেশ