গুচ্ছ কবিতা ।। স্বপ্নীল ফিরোজ
গর্ভবতী অন্ধকার
সূর্যের কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে সমুদ্র মূলত
উন্মুক্ত করে দেয় তার যোনি। দূরে কোথাও শঙ্খ
বাজে আর সিঁথির সিঁদুরের মতো লাল হয় পাথরের
পাহাড়, জেগে উঠে আগ্নেয় জ্বালামুখ। এভাবে গলিত
লাভাবীর্যে অন্ধকার গর্ভবতী হয়ে যায়। এবার দেখবে
ঝিলমিল ঝিলমিল কবিতার মেরুপ্রভা। সূর্যসন্তানের
মুখ দেখে চাঁদ তবু্ও ডুবে যাবে অতল পরিখায়।
যুদ্ধশিশু
ভোলাবালা ডিমগুলো শুধু ভাসতে চায় জীবনের
জলে। লাল কাপড় দেখে তেড়ে আসছে পাগলা
ষাঁড়। অথবা সনদ নিয়ে, ফুল হাতে কে আসে
কিছুই বুঝে না সে। আহা! জীবন, অসহ্য বেদনা
নিয়ে সৌন্দর্যের মোড়কে ফোটে থাকে।
যুদ্ধশিশুর মতো এক-একটি কবিতাও কখনো
এভাবেই ফোটে!
মনপাখি
সবগুলো পংক্তির ভেতর বাঁধা থাকে এক মনপাখি।
বাঁধা থাকে পাঁজরের হাঁড়ে আর মগজের খোলে।
একটি মরমিবাদ থেকে মিহি সুর ওঠে, ‘আনাল হাক্ক—
আনাল হাক্ক’। আর নিঃশ্বাসের সুতোয় বোনা বিশ্বাসের
বাঁধন কেটে পাখি উড়ে যায়। এখন এই পরিত্যক্ত
বাঁধনগুলি দাফন করবে কোন্ মাটিতে? অথবা
পুড়িয়ে ফেলবে কোথায় আছে এমন চিতা?
অন্ধমানুষ
জেন গল্পের অন্ধের মতো বাতি হাতে নিয়ে
একটি জীবন পথ হেঁটেছি। কিন্তু তবু্ও স্বপ্ন
বুকের পাঁজর ভেঙে চলে যায় অন্ধকারে।
না, স্বপ্নের কোন দোষ নেই। বাতির সলতে
অনেক আগেই নিভে গেছে। অন্ধমানুষ
কখনোই তা জানে না।
স্বপ্নীল
স্বপ্নীল, তুমি যখন আমার জন্যে লেবু কচলিয়
রঙ চা তৈরি করো এবং আমি যতক্ষণ রসের
দিকে তাকিয়ে থাকি ততক্ষণ আমি চায়ের কথা
ভাবি, লিকারের সোনালি রঙের কথা ভাবি আর
চমৎকার একটি টক-মিষ্টি স্বাদের কথা ভাবতে
ভাবতে উড়তে থাকি।
আবার যখন তোমার হাতের আঙুলের দিকে
তাকাই তখন চা আর খেতে ইচ্ছে করে না। তুমি
এমনভাবে চিপে ধর লেবুখণ্ড, যেন পৃথিবীর সমস্ত
শ্রমজীবী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়ে যাচ্ছে তোমার
হাত। স্বপ্নীল, তুমি ফিরোজকে কখনো স্বপ্নে
ভাসাও আবার কখনো ডুবাও নীলে।
স্বপ্নীল ফিরোজ, কবি, যুক্তরাষ্ট্র