বিকিনি পরা অমাবস্যা

হলুদ ভ্রমর

হিমেল সন্ধ্যা—কমলালেবুর মতো গাঢ় হয়ে আছে
ঢলে পড়ছে—রুগ্ন, বিষণ্ন প্রজাপতির সুরম্য যৌবনে;
আর একদল বণিক ব্যস্ত বাজার দখলে—নদী গ্রহণে... 
কুমারি ঢেউ পিরামিড হয়ে আছে
                          যেন তৃপ্তির গেলাস
ক্রমে চাপ দিলেই ভরে যাবে—জমে উঠবে উল্লাসী জলে 
অথচ সময়ের চাকায় পিষ্ট আজ হলুদ ভ্রমর—কারও প্রবলে 
বিপন্ন হতে হতে আঁধারে—ভাবে, বৈঠকে বসা চাঁদ— 
আমাদের হোক; দূর হোক প্রস্ফুটিত সকল ফুলের শোক।
 

অবিশ্বাসের কয়েদখানা

বিশ্বাস হারিয়ে মানুষ এখন জীবন্ত লাশ 
আমিও মানুষ; ক্রমেই অবিশ্বাসীর দখলে 

গতকাল প্রেমিকার ঠোঁট দেখে কেঁপেছে হৃদয়
দূরত্বে থেকেছি, দায় থেকে যতোটুকু থাকা যায়।

পাশের রুমে শুয়ে কাশি দিচ্ছেন মা
তার পাশে গড়াগড়ি খাচ্ছে পোষা বিড়াল
আমি নেই, আমার যাওয়া নিষেধ!

নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি না
হাতকে বিশ্বাস করতে পারি না
বন্ধ দরজার হাতলকে অবিশ্বাস করেও আলো দেখি না,
নিরুপায় হয়ে পড়ে থাকি বিছানায়
বিছানাকে চড়িয়ে দিই অবিশ্বাসের দোলনায়
বিছানা দুলতে থাকে, দোল খায়...

প্রাণের স্পন্দন বিশ্বাস হয় না বলে
এখন ছুঁয়ে দেখি না মন
এ যেনো অবিশ্বাসের ধোঁকায় বন্দি আমি— 
আঘাত করি ঈশ্বরের কলিজায়!

মহাপাপ জেনেও বিশ্বাস করি না আজ
যাবতীয় বস্তুর বৈভব, করুণা, প্রণয়।

বিশ্বাস হারিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে
আমিও অবিশ্বাসীর দখলদার।

একলা মানুষ

একটি আঙুল ধরবো ভেবে প্রতীক্ষার কষ্টপাহাড় কাঁধে নিয়ে
কাটিয়ে দিয়েছি শিশুকাল;
সব পেয়েছি যা চেয়েছি, যা চেয়েছেন বিধাতা।

পাখিরা ধরেছে গান, শীতে শুকিয়ে যাওয়া নদীও হেসেছে 
ঘুম ঘোরে ভোর টেনেছি সূর্যকে আড়াল করে
চাঁদের সাথে চায়ের ধোঁয়ায় ঠোঁট নেড়েছি
দিনের শেষে নগ্নমনে খুব কেঁদেছি, ফের হেসেছি
হয়নি শুধু যৌনকালে শিশিরসিক্ত নতুন ভোরে—
রোদ হওয়া, আলোর হাতে হাত রেখে ভেসে যাওয়া
সময়টা যে বিশ্বাসীদের মরণসময়
কাছে যাওয়ার বুকপোড়া ঝাঁজালো বিকেল। 
গতকালও ভাবছি তখন পাখি হবো!

নিজের সাথে বৈঠক করে অবশেষে জেনেছি
অবশ দুপুরজ্বলা মানুষের একাকীত্ব।
 
আজ সকালের সূর্যসংলাপেও সে-কথাই বলা হলো।

বিকিনি পড়া অমাবস্যা

বৃষ্টি কেটে কেটে একটি লাশ হেঁটে যাচ্ছে
তাকে পাহারা দিচ্ছে কয়েকটি শান্ত কুকুর
গ্রামের সবুজ ক্ষেত পেরিয়ে সে শহরের পথে,
চারদিকে উকিলের গাউনের মতো অন্ধকার রাত!

রাস্তা ফাঁকা, ল্যাম্পপোস্টগুলো এক একটি পতিতার চোখ
দৃষ্টিতে কামনার ছলাৎছলাৎ যোনিতে খাদ্যের অভাব
জোনাকহীন নক্ষত্রকে মনে হয় ডাস্টবিন,
সে ময়লার ব্যাংকে ঘুমায় মাতৃত্ব লুকানো চাঁদ।

রাতের ঘুম কেটে গেলে ল্যাম্পপোস্টগুলো শুয়ে পড়ে
আর পতিতারা হয়ে যায় এক একটি পুলিশ
তাদের পৈশাচিক লাঠি সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়
শহরে পুলিশ আর পতিতা ছাড়া কেউ নেই,
আছে কয়েকটি বাহারি রঙের কুকুর,
লাশ জীবন্ত হয়ে কথা বলে, তারপর—
ওদের সঙ্গে নিয়ে মৃত দেহটি ফের গ্রামের পথে ছোটে।

আবার নেমে আসে ফুলতোলা বিকিনি পড়া অমাবস্যা,
ঘুম ভেঙে গেলে দেখা যায় গ্রামগুলো রাজনৈতিক হয়েছে।

গোপন থাকুক কিছু

মন ভালো নেই তাই বলে কি আকাশ দেখা বারণ?
দূরে ঠেলে এসব তুমি একটু রাখো স্মরণ
দূর্গন্ধ ছড়ানো পচা ফুলেরও সুবাস ছিলো—খুব অসাধারণ।

তোমার মনের ময়লাগুলো যাক বাতাসে উড়ে
দুঃখগুলো মেঘের সাথে যুদ্ধে হেরে দূরে
দূরেই থাকুক ক্ষত, ছোটো গোপন প্রেমের পিছু
এই কথাটাও  রাখবে গোপন, গোপন থাকুক কিছু।
মন ভালো নেই সেটাও রাখো মনে
ভিসামুক্ত দুখের কথা এক পলকে ছড়ায় জনে জনে...

আজকে জোছনার সাথে মনের করো লেনাদেনা
আকাশ জুড়ে থাকুক যতো তারা, তাই হোক না হয় গোনা
তবু তোমার মন ভালো নেই এই কথাটা রাখো গোপন
কিছু গোপন গোপন থাকুক! রহস্য থাক আপন। 
 

বই : বিকিনি পরা অমাবস্যা
প্রকাশক : প্রিয় বাংলা
প্রচ্ছদ : চারুপিন্টু
মূল্য : ১৫০


• এনাম রাজু : কবি, সম্পাদক। কুড়িগ্রাম।

menu
menu