একক কবিতা ।। মারুফ রায়হান

মাতাল শৈল্পিক

প্রদর্শনকক্ষ তবে কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান
এ গ্রহেরই প্রকৃষ্ট প্রতীক !

শরণ নেবো কি মিহি তাত্ত্বিকের 
বুঝিয়ে বলেন যদি
দর্শন ও প্রদর্শন কেন এক নয়, তবু 
দৃশ্য ও দর্শক কেন অপরকে দেখে পরস্পর
সে যাক সে থাক, আসি বিন্দুবৎ কেন্দ্রে
মোনালিসা বা ম্যাডোনা কি ভেনাস
কে নবযৌবনপ্রাপ্ত জাগতিক ক্যানভাসে
কে কার নামকরণ করে, লেখে পরিচয়
মূলতবি থাক তার হিসেবনিকেশ

আমার বলায় তিলোত্তমা হয়ে ওঠে কোনো তিল
দারুণ রূপসী হয় কোনো অতিসাধারণ
সে আমারই কাছে, আমার বিচারে
তবু আমি নই বিচারক, সামান্য প্রেমিক

যাকে বলি সাধারণ, সে কি নয় অসামান্যা
নাম তাই তুচ্ছ তকমা, নামধারী জানে আপন মহিমা
আর জানে স্রষ্টা, অনিবার্য প্রথম জনক

আসুন কল্পনা করি শিল্প সৃজনের উপাখ্যান

মুহূর্তের জন্যে হয়েছিল উদ্ভাসিত আদি অবয়ব
তারপর চকিত প্রস্থান, বলা ভালো স্থানান্তর
অধরার পাশের আসনে? এ যে অসম্ভব
অদৃশ্য সে নয়, চোখ দেখে না যদিও
অধরাই বটে, জগতেই উপস্থিত তবু
সে কি বীজ যাতে বৃক্ষ উপ্ত
সে কি বিন্দু যার অন্তরালে বহতা সাগর

একটি বিশুদ্ধ ভাব, ভাবুকতা কাঙ্ক্ষা যার
সে কি নিরাকার আর নিত্য দৃশ্যমান
রচিত হবে সে, নাকি নেবে পুনর্জন্ম
অসংলগ্ন সহস্র প্রশ্নের ভিড়ে 
ব্যগ্র শিল্পী একাগ্র 
একাকী 
একনিষ্ঠ
সাধনা ও আরাধনা বিনা নেই মোক্ষ
আর কে না জানে সৃষ্টি হলো চিরন্তন রহস্য অপার
দক্ষ স্রষ্টা কতোবার হলো ব্যর্থ 
যথাযথ প্রেমেরই অভাবে
তাই চাই সযত্ন প্রয়াস ঘোর নিবেদন

একেকটি ঋতু হলো প্রথম দর্শক
যদি বলি শিল্পসাক্ষী, তবে শোনায় সুন্দর
গ্রীষ্ম এসে ফিরে যায় স্বপ্নভস্ম ছুঁয়ে
বর্ষা জানে সিক্ততার মন্ত্র, তবু আসে না সাফল্য
শরৎ সামান্য শিহরিত, সরোদে তুলেছে মন্দ্রসুর
হেমন্তসন্ধ্যায় যার মাঝে সংকেত জানাবে পূর্ণ গান
গাঢ় শীতরাতে উষ্ণতর হবে শীতনিদ্রামগ্ন তুলি 
আত্মবিশ্বাসী বসন্তও হতে পারে আশাহত
ষড়ঋতু কেন শেষে করেছে ধারণ ষড়রিপু!

শিল্পীমন নিজেই কি নয় সবকটি ঋতুর ঈশ্বর
তার ভেতরেই আছে গ্রীষ্ম-ঘ্রাণ, ঘূর্ণিঝড়, ব্যথিত বাদল
ক্ষুব্ধ জলোচ্ছ্বাস, খরা খরচোখ, বসন্তবাহার 
আর ঝরাপাতাদের গান, যুগপৎ সুখ ও বিষাদ

সৃষ্টির রহস্যগৃহ হতে যাত্রা প্রদর্শনকক্ষে
প্রেমিক বা রসগ্রাহী যাই বলি, তার দৃষ্টিতেই
শিল্প বা শিল্পীর সার্থকতা ও ধন্য জনম
অর্থমূল্যে নিয়ে গেছে যাকে অচেনা দেয়াল, তবু
পেলো কি সার্বিক স্বত্ব, নিরঙ্কুশ অধিকার
শিল্প ও রসজ্ঞের মাঝে গড়ে ওঠা সম্পর্কসৌরভ
চিরআয়ুষ্মান, স্রষ্টার বন্ধন ছিন্ন অসম্ভব

আমার প্রেয়সী নেই আমারই নিবিড় আলিঙ্গনে
বিমূর্ত শিল্পের মতো সুনিশ্চিত কোথাও অস্তিত্বমান
অদৃশ্য প্রণয়চিহ্ন নিয়ে তন্দ্রাতুর নাভি তার
আমাদের আত্মীয়তা কালের সীমায় নয় অবরুদ্ধ

একদা আমার চোখ ঢলেছিল যে-সুধায়, গলেছিল 
অজ্ঞাতসুন্দর পিপাসায়, মাতাল শৈল্পিক
চায়নি স্বীকৃতি তবু প্রেমসঞ্চিতার

কার সাধ্য আমাদের বিচ্ছেদ ঘটায়


• কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ।

menu
menu