তিনটি কবিতা ।। রবীন বসু

চণ্ডালের শোক নিভে যায়

মৃত্তিকা কাঁপছে দেখো, জলরেখা নিরুদ্দেশ হল
গভীরে সঞ্চয় নেই খেলা করে উদ্বেগী হাওয়া
জীবন যাপিত হয় অহরহ এপাশ ওপাশ
তুমি শুধু নিঃস্ব হও, নিষ্পেষিত পতনের ক্ষয়


অধরা ইচ্ছারা সব পথ হাঁটে হামাগুড়ি দেয়
চৈতন্যে বিলাস নেই, বিলাসিত মল-কালচার
গোপনে গোপন ভাঙে ছত্রাকার সুসজ্জিত দেনা
মোহিতে আবিষ্ট কেন ইত্যাকার লোভনীয় পাশা

সব খেলা শেষ হবে সময় বসাবে তার থাবা
সভ্যতার হুঁশ নেই বকলমে চলে গণতন্ত্র
বাস্তুতন্ত্র ঘাড়ে নিয়ে বিবর্তন পর-মুখাপেক্ষী
জল তাই উবে যায়, শ্বাসকষ্টে প্রবাহিত ঋণ

মানুষের বিষম পাপ আজ দেখি উঁকি দেয়
মৃত্তিকা গভীর হলে চণ্ডালের শোক নিভে যায়। 

নগ্ন কথকতা

এইমাত্র ভাদ্র চলে গিয়ে এল আশ্বিন মাস
এইমাত্র মেঘ উড়াল দিল উৎসবের দিকে
বর্ষা তার কালো ঝাঁপ টেনে দিল অনীহার
আলোকিত আকাশ তা দ্যাখে ফুটন্ত কাশ। 

এ জীবন কী পেল কীই-বা হাত ফসকালো
সঞ্চয়ে গভীর হল নাকি উদাসীন মনকেমন
ফেলে আসা মেলামাঠ বেলাশেষে ভানুমতী
চিন চিন ব্যথা নিয়ে হৃদয় ভরে কম আলো। 

এই যে আশ্বিন মাস, খুশিভরা উৎসব রেশ
পুরনো গন্ধ নিয়ে নতুন চালের হাই-হ্যালো
তাকে মাঝখানে রেখে ডুবে যাচ্ছে সাঁতার
অদৃশ্য অনন্তকে ছুঁয়ে অনভিপ্রেত প্রবেশ। 

যত সাবধানে থাকি যতই গোপন রাখি ব্যথা
কবরের ঢাকা খুলে উঠে আসে নগ্ন কথকতা। 

আমার সভ্যতা মুখ লুকায়

এই যে বেদনারহিত সকাল
এই আলোময় দিনের শুরু
            আমাকে আশা জাগায়

যে মানুষটা ভোরে উঠে উনুনে আগুন দেয়
চায়ের জল বসায় সারাদিনের মত
যে মাজাভাঙা বৃদ্ধা বেওয়া
     কটা শাকপাতা নিয়ে সবজির ট্রেন ধরে

এরা সবাই আমার আশেপাশে ঘোরে
আমাকে জীবন দেখায়
      চেটেপুটে খেয়ে নিই এই অনিঃশেষ
                                        জীবনের দান

তারপর যখন সন্ধ্যা নামে রাত্রি
ক্লান্ত পাঁজরে দাঁড় টানে অভুক্ত মানুষ
        ফুটপাত ভরে যায় অনালোকিত জ্যোৎস্নায়

আমার সভ্যতা তখন মুখ লুকোয় শতচ্ছিন্ন কাঁথায়… 


• কবি, ভারত। 

menu
menu