গুচ্ছ কবিতা ।। সাখাওয়াত টিপু

মায়ের কবিতা
কেনো চোখ মুদে আসে ঝাপসা আকাশে
ভিজতে ভিজতে বৃষ্টিতেই অশ্রু মিশে যায়
কেউ যদি দেখে আজ এমনি এমনি কাঁদি
তবে কেনো আমি নিজেকে লুকিয়ে কাঁদি?
আজ অকারণে মায়ের মুখের দিকে তাকালাম
আজ যে কন্যার চোখে চোখ রাখতে অক্ষম!
ভয়ে তার ফর্সা কপাল নিয়ত কাঁপছিল
কালো ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছিল বিষণ্ন ক্রোধে
দাঁত কড়কড় করছিল পৃথিবী ভাঙবে বলে
বললাম : মা গো, লড়াই করতে শেখো!
মেয়েটি বলল : বাবা কেনো মেয়ে হয়ে জন্মালাম?
বললাম : মারে তুই না হলে আমি কি করে আসতাম?
কে যেন বলছে অবলীলায়!
হায় দেশ ভেসে যাচ্ছে দূর
কেনো দেশের বাহিরে ঢের
বাজারে বাজারে আসে পরদেশ!
রোজ ধর হতে মাথা হেঁটে যায়
বুক ফেটে হৃৎপিণ্ড আচানক
ছিটকে পড়ছে ভূমির ভিতর!
বড় অবেলায় কেউ যদিবা হারায়
হাড় গোড় কার কি, কোথায়?
কে যেন বলছে, গিলছে অবলীলায়!
কূল ভাঙা তরীটিকে, হায়
কে বাঁচাবে গুপ্ত কুয়াশায়
আম্মা নয়া কলোনির খোপে
আহা খোলা চাঁদ ডুবে যায়!
যদি ডুবে যাও তরীটির নিচে
মাঠের পরের মাঠ, জল নেই, চরাচরে
নদীর পরের চর, স্রোতহীন, পারাপারে
স্মৃতি হয়ে থাকো মাটির কঙ্কাল।
আমড়া কাঠের বিশ্ব
পুঁজির বাজারে আমার পা
কেনো আপন পায়ে থাকে না?
আমি কি পায়ের মাপে জুতা
নাকি জুতার মাপে পা, মাপি
পাটা আমার দেখিতে বনসাই
পায়ের মাপের জুতা কই পাই?
আমার পা বড় হয়ে উঠবে কখন
কিবা ছোটো হবে, পুঁজির ফিতায়
আলাদা এমন কোনো দুপা নাই
তাই আমি তাকিয়ে ছিলাম নিচে
আসলে পায়ের নিচে চিড়েচ্যাপ্টা
আমড়া কাঠের বিশ্ব কেঁপে যায়!
লিচু চোষা বুদ্ধিজীবীগণ!
ব্যবহারজীবীদের ব্যবহার খুব ভালো!
নরম নরম গলা, নাদুসনুদুস কথা কয়।
তবলা বাজায় মাঝে সাজে হরদম।
যথা ধ্বনি তথা কম। মৃদুলয়ে দম।
কত রক্ত ঝরে কত প্রাণ ঝরে তবুতম
বুদ্ধিজীবীদের দেখাই যায় না একদম
লিচু খায়। ঠাকুর বাড়িতে জল খায়।
কদাচিৎ বলেন, না হলে হাল্কা টলেন।
পাজামা পরেন। ডানে কাৎ হয়ে শোন।
বুদ্ধিজীবীরা কেবল গ্রীবা লুকিয়ে রাখেন।
উটপাখিসম দুপা। মাথা গোল, তুলতুলে।
ঢিলাঢালা ঘাড়। দলা ময়দার মতো হাড়।
রবীন্দ্র গায়িকা দেখলে দুইপাটি হাসেন।
কোমল কোমল সাহিত্য ভালোবাসেন।
বুদ্ধিজীবীদের হাত মোলায়েম। রেখা নাই।
দুচামচ তেল পেলে কেবলিই হাত কচলায়!
কি বলতে কী বলেন। যাতা তৈলাক্তবাহিত!
ঢিলা ঢিলা ভাব নিয়ে ওই গৃহপালিত যায়।
• কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ।