গুচ্ছ কবিতা ।। আনোয়ার কামাল
বেদনার ফেরিওয়ালা
এখন কেউ কেউ গোলাপ নিতেও ভয় পায়
গোলাপের কাঁটা শেষে ক্ষতের সৃষ্টি করে—
পুরোনো বেদনা আবার যদি জেগে ওঠে
তেল ফুরানো প্রদীপের শুকনো সলতে যদি
নেভার আগে আবার দপ করে জ্বলে ওঠে—
শীতের আগাম বার্তা বুকে ফেরি করে
ফেরারি হেমন্ত, জেগে থাকে বসন্ত গোলাপ
শুকিয়ে যায় খরস্রোতা পদ্মা, অভাবী কাঙাল
উদোম শরীরে রোদের প্রলেপ মাখে—
ঘর বাধে ঘর ভাঙে বেদের বহর—
কেউ কেউ হৃদয় খুঁড়ে বেদনা যাচাই করে
বেদনার গভীরতা স্কেলে মাপে—
একজন শিকেয় তুলে রাখে জমানো দুঃখ
পরের বছর বেচবে বলে—
এখন অবশ্য ফি বছর বেদনার মূল্য বাড়ছে
বাড়তে বাড়তে একদিন ঢের চড়া দরে বিকোবে
বেদনার ব্যবসায় ক্ষতি বলে কিছু নেই, কেবলই লাভ
পারলে রাশি রাশি বেদনা বুকের গহীনে জমিয়ে রাখো
মজুতদারিতে তুমি লাভবান হবে।
হয়তো অন্য কোন ঈদে
ভালো থাকবে আমার গাঁয়ের সবুজ ঘাস
ভালো থাকবে আমার বাড়ির পেয়ারা গাছ
ভালো থাকবে আমার উঠোনের রঙ্গন গাছ
ভালো থাকবে আমার আম, কাঁঠাল, মেহগনি
কতবেল, লেবু, জামরুল, লিচু আর জাম গাছ।
সুপারি আর নারকেল গাছগুলো আমাকে খুঁজবে
তাল গাছটি এখন বেশ বড় হয়েছে; তবে ফল নেই
সজনের গাছগুলো মনে হয় প্রখর রোদে নুয়ে পড়েছে
বাতাবি লেবুর টসটসে মিষ্টি রস এখন আর নেই
সে এখন বয়োবৃদ্ধ রমণীর মতো চুপসে গেছে।
তোমরা ভালো থাকবে; এ ঈদে তোমাদের সাথে
দেখা হবে না।
ছায়া
গভীর রাতে ঘুমের ভেতরে
আমাকে একটি ছায়া তাড়া করে—
যেন নিশাচর হয়ে ঘিরে রাখে
আমি রাতে ঘুমাতে পারি না
গভীর রাত অবধি জেগে থাকি।
ঘুমের ভেতরেই প্রাণপণ দৌড়াই
ছায়ার সাথে আমার দূরত্ব কমতে থাকে
আমি রাতে ঘুমাতে পারি না
গভীর রাত অবধি জেগে থাকি একা।
একদিন নদী হবো
আবার আসবো আমি নদী হয়ে
রেখে যাব পলিমাটির চাষ
ধুয়ে দেব সমাজের জঞ্জাল যত
দিয়ে যাবো ভেতরের নির্যাস।
প্রতীক্ষা
একটি সুন্দর সকালের প্রতীক্ষায় আছি
একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের
একটি জোছনাময় রাতের চাদরে
আচ্ছাদিত কুয়াশা ঘেরা ভোরের
একটি সুন্দর সকালের প্রতীক্ষায় আছি
বিপ্লব স্পন্দিত চেতনায়—
কৃষকের সারল্য হাসি দেখার জন্য
ক্ষেতমজুরের মাথাল উঁচিয়ে রোদেল দুপুরকে
ভেদ করার জন্য
একটি সুন্দর সকালের প্রতীক্ষায় আছি
পালা বদলের জন্য।
• মতিঝিল, ঢাকা