গুচ্ছ কবিতা ।। শওকত হোসেন

০১.
করোনা সোনালি আপেল

করোনা সোনালি আপেল তোমার ঘূর্ণিতে ওড়ে
রাজা নামের ধুলোবালি— 
.
গুণমুগ্ধ তুমিই সেই, মানুষের, ভেবো না
এ তোমার অধঃগতি!
.
খুব চিনি নিরাত্মীয় নও, লুকিয়ে যাও তুমিও সোনালি,
শাদা দিনের ভাবনাবাজি!
.
বেড়ালের মতো করে থাবায় শান দেই
চৈত্রের মাটি, গ্রহণ করি বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায়—
.
বারুদের গুদামে আগুনজ্বলা ঐ রাত তুমি;
.
পেছনে তাকালেই টুটি ছিঁড়ে খাবে ওরা,
বগলঝরা গুড়াচুল উড়িয়ে 
ঢেকে দেবে চাঁদেরও জ্যোৎস্না লোভ, জনসমাগম
.
কেননা, ঘুর্ণিতে উড়ছে রাজা নামের ধুলোবালি!

০২.
অক্ষরবৃত্ত, মুক্তগদ্য, অমানুষের মতো 

মানুষের মৃত মুখ জানি পাব আর কয় দিন পরে— 
যদি যাই সময় থেকে নেমে, কয়েকটা সুতাকাটা ঘুড়ি
পার হয়ে, পেয়ে যাব আমিও আমারে— 
তখন যদি কেউ করোনার ডরে, না আসে কাছে আর তখনো 
পথের কচু গাছটা আপনা থেকে সহজে মাথা নাড়ে
শব্দ করে ডাক দিয়ে যায় খালি ভিটায় ঘুঘু,
বুকে হাঁটা শামুকের মতোন বেঁচে উঠবে কিছু— 
পিছু পিছু নৈরাজ্য ছুতায়
শবের গন্ধের মতোন গরম গর্তে নড়ে উঠবে সাপ— 
ফণারও থাকে যে ঈশ্বর
—নাকোচ হবে, বিদায়ের ভাবনারাজি— 
পড়ে রবো অক্ষরবৃত্ত, মুক্তগদ্য, অমানুষের মতো!

 ০৩.
কান্নারাও তবে চির-ভাস্মর হতো

এমন ভাবিনি কখনো, কান্নার অরণ্যে এতো ডালপালা থাকে— 
এতো কাল একা একা নিজের সন্তর্পণের কাছে
পাইনি যে দুঃখের জবাব
খুঁজে পাইনি আমার ম্রিয়মান ভোরে
কেন এতো মন খারাপ থাকে,
আমি কেবল মায়ের ক্রন্দনের সাথে রেখে মিল
আমার চারপাশের সাথে রেখে তাল
আমার দেশের সাথে ফেলেছি দুঃখের কদম,
এমন ভাবিনি সত্যি আর, কান্নারও আন্তর্জাতিকতা থাকে...
*
অরণ্য থেকে আজ সব শেয়ালচোখ
দেখে নিচ্ছে অন্ধকারের চিৎকার,
নিস্পৃহ রসে, থেমেছে অনাহূত ভিজে যেতে,
কখনোই এমন ভাবিনি আমার, কান্নারও আন্তর্জতিক হতে,
হবে না পেতে বেগ— 
*
আমি তবু রয়ে যাব ঠিকঠাক আগের মতোই
একান্ত রেখায় নিজস্ব কান্নার অন্তর্গত— 
*
অরণ্য দেখে দেখে যদি শিখে নেয়
যদি আঁধারের কলবে কিছুটা লিখে দেয়,
দেয় আমার ক্ষত,
আন্তর্জাতিক কান্নারাও তবে চির-ভাস্মর হতো!...

০৪.
ছড়ানো ছিটানো পথের—একসাথে রেহাই! 

করোনা চায় ভাঙা টুকরোগুলোকে জোড়া দিতে, এখন
ছিন্নভিন্ন পাতা ও কাগজ, সুরা ও আহ্লাদ
অলিগলি হতে বের হয়ে মাঠে ময়দান পাক—
যার যার ধোঁয়ায় অন্ধ হয়ে আসা 
টুকরোগুলো একসাথে হয়ে, পূর্ণ শীতেও কেঁপে যেতে
পূর্ণ স্নান, পূর্ণ আলোয় নিদেন
এ-চাওয়া একেবারে কম নয়,—ও আসলে
চায় ছড়ানো ছিটানো পথের—একসাথে রেহাই!

০৫.
আজ বড় স্পর্শ বিমুখ

কায়ক্লেশে ভাঁটফুল দাঁড়িয়ে আছে মৃত রোগীর মতো— 
চুম্বন দেবার কথায় ভিজে ওঠে ওর চোখ, দুঃখ ও শোক
ধেয়ে আসা ছুতা ও রোগ—মায়া, আজ বড় স্পর্শ বিমুখ— 
নীলবিষই ছিপি খুলে ওযে বাহিরে!
কোথা আজ মোরা—ঘরের মধ্যে ঘর—তাতে মন নাহিরে—   
ঋজু ভাঁটের মাথায় করনীয় ঝড়, সবাই তার পর
উশিখুশি পথে—করোনা বিঁধুর— 
মনোফুল জানে একাগ্র মায়ায় পৃথিবীতে তবু শিশুরাত— 
নাকি মানুষের বিকল্প দাঁড়িয়ে গেছে!
ভাইরাসে মনোদোল সাইরেনে হারিয়ে বিপুল
ধেয়ে আসা ছুতা ও রোগ—মায়া, আজ বড় স্পর্শ বিমুখ—!  

 ০৬.
নিরুদ্ধার মুছে দেব

শিশুদের মতো অকারণ আচরণ করে চলে যাব
করোনায়—লেগে থাকবে জঙ্গলে সব কিছু 
সাপটে কাদাজল, অসহ্য ঈশ্বর;
মশারির তালি-তাপ্পি, ছারপোকা, ঝুলকালি
সংশ্রবে নেব ফের—ঈশ্বরটাকে সরাবো— 
যাওয়া না হলে আসা যায় না তাই যেতে হবে বলে
ভেঙ্গে দেব ঝাপসা ভুল আলোর ইশকুল—যেখানে 
কালো মানেই সাদা—গরু মানেই নেতা— 
ডাটাক্ষেতের আহত শালিকদল দাঁত কেলিয়ে হাসবে
তখনো, ছুড়বে অযুত নরোম ননীশূল— 
স্বভাব আমার সাবলীল ভুল—চিৎ-বৃষ্টির কাদায়,
মাকড়-জোঁক-বাঁদায় গিয়ে নিরুদ্ধার মুছে দেব— 

 ০৭.
করোনা, পৃথিবীর ভেতরের ক্রোধ

সমস্ত করোনা, পৃথিবীর ভেতরের ক্রোধ! একবারে যা
বলোক নিয়ে নামে— 
পাকা নিমফল, রোদের গুঁড়ো, লোকগ্রস্ত যতোই থাকুক,
রোগগ্রস্তে বুক তার, ভার হয়ে আসে— 
.
দিঘির পারে একা দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছটা জানে
সংখ্যাতত্ত্বে মৃত্যুর অপেক্ষায় কত নম্বর সে—
.
এই তত্ত্ব তারচেয়ে ভালো জানে, কাঠঠোকরার অমর কোটর—
.
আঘাতগুলো গোপন রাখা আমাদেরো ভেতর
ক্ষণে ক্ষণে সে জীবাণু করে জমা
ব্যথাগুলো গুণে গুণে অতোগুলো তালবীজ বোনে!
.
শীত ও বৃষ্টিতে ভিজে 
দিনে দিনে বেড়ে ওঠে মৌন শতসভা—
বুদবুদ আকারে ও কারণে
দায়দোকানে, কেনা ফুল-পাঁপড়ির মতো সে, ছেঁড়া থাকে— 
.
মৃত্যুকে উপঢৌকন ধরে শরীরে নেমে আসে লাশ
বেঁচে থাকে শুধু হাত-পা নাড়ানাড়া!


• ঢাকা

menu
menu