তিনটি কবিতা ♦ হানযালা হান

শুঁয়োপোকা

শুঁয়োপোকা, শুঁয়োপোকা, প্রজাপতি হবে?
—ঠাট্টা করছ?
শুঁয়োপোকা, শুঁয়োপোকা, প্রজাপতি হবে?
—দেখছ না ভাই, আমার হাত নাই। পা নাই। বুকের ওপর ভর দিই?
শুঁয়োপোকা, শুঁয়োপোকা, প্রজাপতি হবে?
—পাখনা পাবো কোথায়?
শুঁয়োপোকা, শুঁয়োপোকা, প্রজাপতি হবে?
—হবো, হবো। 

শুঁয়োপোকা ধ্যানে বসে পাখার জন্য।
কোমল শরীর ফেঁড়ে গজায় পাখনা।

 

নীল তিমির গান

টুট টুট টুট, ৫২ হার্জ, অশ্রুত স্বরতরঙ্গ, ভীষণ কোমল আর নিচু, সেই স্বরে একটা তিমি, নীল তিমি, একাকী, বিরহী, ত্রিশ বছর ধরে গেয়ে চলেছে একটা গান; কী বেদনা তাঁর হৃদয়ে? প্রশান্ত মহাসাগরের সব দুঃখ কি সে শুষে নিয়েছে? নাকি তার জীবনের কোনো আলো নেই? সে কি খুঁজছে কোনো সৈকতযেখানে অনায়াসে আত্মঘাতী শত শত পেঙ্গুইন? একবার মনে হয়, আমিই সেই নীল তিমি, গত ত্রিশ বছর ধরে খুঁজেছি এক অপরূপ মায়া;

ধ্রুপদী সঙ্গীতের মতো, যত না কথা, তার চেয়ে বেশি তাল-লয় ঠাট-সুর, টুং টাং, সা রে সা রে, সমুদ্রের নোনা জল ভেদ করে এই সুর ছড়িয়ে পড়ে উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে, পৃথিবীর এতো এতো নীল তিমি, কেউ তার গান শোনে না, হয় তো তারা অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা, একে তারা মনে করে পদার্থের সংঘর্ষ, ফলত পূতপবিত্র দেবতা হয়ে যায় রাক্ষস, কোনো এক রাজ্যপাট ছাড়া যুবরাজ ধ্যানে বসে, তার কানে পৌঁছে যায় ক্ষুধার্ত একঝাঁক পরিযায়ী ময়ূরের ডাক, নকশিকাঁথার মতো পেখম তুলে এক নারী বিছায় বাসরশয্যা, কিন্তু সেই স্বর পুরুষেরা মনে করে কোনো ঝোড়ো বাতাস;

 

আনন্দ বাজার

আনন্দ বাজারে যাই, যা মনে চায় সব কিনি, এখানে কোনো কিছুর অভাব নাই, ওজনে কম তো দূরের কথাবরং বেশি দেওয়া হয়, সব পণ্য বিনা মূল্যে, এক দিন এলেন এক অদ্ভুদ মা, তিনি তাঁর সন্তানের  জন্য খুঁজছিলেন ঘোড়ার দুধ, এক কানাগলিতে কৃষক দাঁড়িয়েছিল তার আরবি ঘোড়া নিয়ে, সেই ঘোড়ার বাট ছুঁলেই দুধ বের হয়; পাহাড় থেকে এসেছে এক চাকমা, তাঁর মা মারা গেছে তাই হাঙরের শুঁটকি দরকার, একটা হাঙর ধরে শুটকি বানিয়ে দিলেন জেলে, আর এক তরুণ এল তাঁর বোনের বিয়ে, রান্না হবে সুগন্ধি মশলায়, সাত গ্রামের মানুষের নাকে যেন পৌঁছে যায় ঘ্রাণ, এক পথশিশু পায়ে ত্বকপ্রদাহ, সে খুঁজছিল কোনো ঔষধি, বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী একটি নিমগাছ থেকে পাতা পেরে পাটায় বেঁটে দিলেন, আহা, আরাম! আরাম! এক চাকরিজীবী এসেছে বাজারের থলে নিয়ে, সে চায় মাছমাংসসবজিতে ভরে যাক থলে, চোখের পলকে তা ভরে গেল; এটা সেটা দেখে দরদাম করে এদোকান ওদোকান ঘোরে মাঝেমধ্যে পকেট হাতরে দেখে টাকায় টানআনন্দ বাজারের তরুণ কবির মতো এই গরিব কেরানির অবস্থা; আনন্দ বাজারে এলে আনন্দ পাই, কান্না পাই, হাসি পাই, বেদনা পাই, আনন্দ বাজারে আছে নিরানন্দ চরমানন্দ;

menu
menu