তিনটি কবিতা ♦ আহমেদ মোসলেহ্
জীবন নদী এমনটাই
সকাল বেলার গল্পটা বলবো আবার আজ
সেই যে আকাশ সেজে ছিলো নতুন বধুর সাজ
পূবাকাশের লাল আভাটায় দেখতে পেলাম টিপ
দূর্বাঘাস সাজিয়েছিলো ছোট্ট নতুন দ্বীপ
দ্বীপের মাঝে পাখ পাখালির কিচির মিচির গান
মন সাগরে সাত সকালে তুলেছিলো বান
বানের সাথে সখ্য ছিলো খালে বাধা নায়ের
মনে পড়ে স্মৃতিটুকু মেঘনা পাড়ের গাঁয়ের?
ছোট্টমেয়ে সাথে ছিলো ময়না তার নাম
খুলতে গিয়ে সংকোচ বোধে রেখে দিলাম খাম
সবুজ রংয়ের খামটি ছিলো আলপনাতে ভরা
আকাশ তখন নেমেছিলো হেসেছিলো ধরা
ধরা যখন বললো আমায়
ডুব দিয়েছিস পাশা খেলায়
আমি তখোন বাউলা পথিক
দু চোখ মোর এদিক ওদিক
খুঁজছিলো কী আছে মনে!
দুষ্টু পাখি শিমুল বনে
এই ডাল থেকে ওই ডাল বেয়ে
এক নিমেষেই উঠলো নেয়ে
তখোন তুমি বলেছিলে আজকের মতো থাক
জীবন নদী এমনটাই পথে পথে বাঁক।
আরো একটা গল্প ছিলো
অতঃপর তার গমগমে গলায় গল্পটা
শুরু হলো ঠিক এভাবে:
সম্মানিত সুধীজন
আজ আমরা গল্প নয়, করবো সত্যের সন্ধান
তিতাসের এই তামাটে তটে
আমরা করেছিলাম রোপণ আলু ও বেগুনের চারা
অল্প কিছুদিনে সে হয়েছিলো সবুজের তট,
কেউ কেউ বলছিলো সবুজ দ্বীপ।
এমন সময়ে চারদিকে অন্ধকার
ভ্যাপসা গরম, পাখাগুলো স্থির
অস্থির দর্শক, কিছুটা হৈ চৈ বলাবলি এটা ওটা
কিছুক্ষণ পর
আলো ঝলমল হলো ডায়াস
বক্তার চোখে মুখে সুখসাগর
ডায়াসে বসা গুণিজনেরা ততোধিক সুখী।
প্রথম পাঠ শেষে যোগ করলেন—
আর তা থেকে কৃষককুল যখন
উঠতে শুরু করেছিলো স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে
তখনই এসেছিলো প্লাবন
সে এক অন্য রকম—পরিষ্কার আকাশ
বজ্রপাতের নাম নিশানা নাই।
আবারো সেই পূর্বের নাটক
দর্শকের হৈ চৈ, গালাগাল, তির্যক প্রশ্ন
ক্রমান্বয়ে ক্রোধান্বিত হচ্ছিলো ওরা
এবারের পর্ব স্থায়িত্ব পেলো কিছুটা বেশি
অতঃপর এলেন তিনি
আহা কী আনন্দ! যেন পাওয়া গেলো
অপ্রত্যাশিত কিছু।
বক্তার আত্মপ্রত্যয়ী চোখ
নাসিকায় ছিলো যদিও ব্যতিক্রমী সুর
আবারো প্রথম এবং দ্বিতীয় পাঠ শেষে
যোগ করলেন সামান্য কিছু।
একবার তাকালেন প্রথাসিদ্ধ পোশাকের দিকে
সবকিছু ঠিকঠাক—প্যান্ট, টাই, কোট
দর্শক গ্যালারিতে চোখ হলো নিবন্ধিত
হতাশ হলেন না মোটেও
নিমিষেই আবার উধাও
সময় এবং হৈ চৈ—দুটোই দীর্ঘতর হলো
আর এগুতে পারলেন না তিনি
আর হ্যাঁ, তার গল্পের ভিতর
আরো একটা গল্প ছিলো।
শুধু বৃষ্টি, বাতাস
আজ থেকে আমার খাদ্য তালিকায়
থাক শুধু বৃষ্টি বাতাস।
চাইনিজ, ফাস্ট ফুড, অমুক তমুক শাহি খাবার
ওসবে অনীহা জন্মেছে বেশ।
এগুলো বনানী, গুলশান, দিল্লি, মোম্বাই
এ জাতীয় বড় বড় শহরের সাহেবদের মানায়।
আজ থেকে আমার খাদ্য তালিকায়
থাক শুধু বৃষ্টি, বাতাস।
ভাত, মাছ, মাংস, রুটি এসবেও
অনীহা আমার, ভীষণ অনীহা।
এ গুলো গ্রামের, গঞ্জের স্বচ্ছল মানুষদের খাবার।
আজ থেকে আমার খাদ্য তালিকায়
থাক শুধু বৃষ্টি বাতাস
নিরামিষে ও অনীহা আমার
মন্দির, আশ্রম মাদ্রাসায় নিরামিষের আধিক্য
থাকে বেশি।
আর আমিষ, নিরামিষ যাই হোক
শরীর পেয়ে যায় প্রতিদিন
প্রায় দু হাজার কিলো ক্যালোরির যোগান।
আয় থাকে ব্যয় কম হলে
বাড়ে বিপত্তি
কোথায় যাবে এ শক্তি?
আসিফাদের প্রয়োজন পড়ে মন্দিরে
তনুদের জঙ্গলে
পার্বতীরা পাষণ্ডদের তাপ মেটায়
বাস, ট্রেন লোকালয়ে।
আজ থেকে আমার খাদ্য তালিকায়
থাক শুধু বৃষ্টি, বাতাস।