গুচ্ছ কবিতা ।। অরবিন্দ চক্রবর্তী

বীক্ষণজগৎ

ডাকাতদলের পিছু নিয়েছে মানুষচক্র। অভিন্ন চরিত্র ধরে আমি লিখছি তোমার গার্হস্থ্য। অর্থাৎ, আসছে বসন্তে মুখোশ বদল করবে যেকোনো কুশীলব। জেনে রাখা উচিত, আমাদের পাশে যত কোষ-অভিধান হালুম অথবা মিউমিউ করে কারও ত্রিনয়ন নেই। সকলেই কস্টিউম ব্যবহার করে তোমার সাথে বিনিময় করছে ইন্দ্রিয়দোষ।

এই যেমন, ডাকাত ভাবনার ভেতরে বিশেষণ আর সর্বনাম আর প্রকৃতি আর প্রত্যয় আর প্রতিষ্ঠা আর সর্বনাশ সবই সমানে সমান এক কাতারে হাজার উজানে বাঘে মহিষে একঘাটে ঘোল খেতে নেমে গেল আর আমি তোমার সংসার পান করব বলে একদিন মানুষদল থেকে ছিটকে পড়লাম তোমার হাসির টইটুম্বুর মিউজিকরুমে।

বি. দ্র.
উপমান যা হলো, চমকিতসকল তোমার চোখে আমাকে দেখল। আমার চোখে সাত্যকিগণ যা পেল সবই শাশ্বত নয়, এটুকু মেনে নিলেই সকল চরিত্র বস্তুত একাকার এবং যথার্থ চক্রাকার।

চুমু

এমন পরিস্থিতি ঘেঁষে পিঁপড়ে পাওয়া গেল। 
ভূমধ্যরাত শেষে কারও দোষ দেওয়া যায়?

ঘটনাজুড়ে মায়া ওড়াউড়ি—
মানুষের স্বপ্ন আর পুরুষের কামনা যেখানে একাকার।
আপাতত আলুথালু ঠোঁট ফরেনসিকে পাঠানোর প্রস্তুতি।

বিস্তর বরফের মধ্যে তোমার মুখ আমাকে সচকিত রেখেছে
সন্দেহবাচক যা ফুটবে—
সকল সর্বনাশের মতান্তরে আমাকে দৃশ্যে রেখো।

ঋতুভিত্তিক

থার্মোমিটার আর শরীর বিষয়ে যতক্ষণ সম্ভব কৌতুক করতে থাকুন।

দেখবেন, সুখ আর অসুখ 
শব্দ দুটির ঝুনঝুন আপনাকে ধীর হতে দিচ্ছে না।

ক্যাসেট প্লেয়ার এবং একটা থাপ্পড়ের ইতিহাসবিষয়ক জ্ঞান থেকে
আপনার কোলে দুলছে আশ্চর্য হাহাকার।

অবগত আছেন নিশ্চয়ই, উজান সময়ে মানুষকে সিরিয়াস হতে হয়
ফলে, দেহ সর্বদা শরীরের পক্ষে সায় দেয় আর হৃদয়পিণ্ড মৌসুমী হয়ে ওঠে।

পরশরীর বনাম অপর শরীর

কারও শরীর উদ্ভিদ, কারওটা খনিজ।
কোন বিহারে যে যাই!

বহু জনন পারাপার শেষে ফুটো জীবন নিয়ে পৃথিবীর মানুষ 
একেকটা সোনার ছাগল, তবু এ জাতি খুশবু রঙের খুশি।

তা হোক, এবার বাজি ধরো যেকোনো শরীর নিয়ে। স্মরণে রাখবে, 
শরীরকে যতবার শরীর জেনে সালাম করবে, নামতা শেষে গুণন পাবে পুরুষ; 
পাশেই, তুমি এক গাহনভিত্তিক কৌতুকঘর।

প্রসাধন ঢালা হবে ধানী মাঠে; কাকাতুয়া খিল্লি করবে। খানিক বুঝবে, 
এ এক অর্বাচীনের ঘুঙুর; বেকসুর নাচছে।

বিশদ সবুজকে বলবে, এ দেহ আমার। এমন জেনে রঙের সকল বিশেষণ
তোমাকে পেয়ে আহ্লাদিত; 
পরম আকাশ বিছিয়ে খুলে দেবে উদার বিস্তার।

অথচ, কোনো আরোহন ধরে লিখতে পারবে না অপর শরীরের মহিমা;
প্রতিটি চিহ্নে বর্ণন হবে পোকার ইতিহাস আর গুমোট রক্তের বিবমিষা।

বনখেকো 

জঙ্গল পুড়ছে-জবাইয়ের ধোঁয়া পেয়ে এগিয়ে এল শিকারি।

দেশের ঘর থেকে যেকোনো জন দমকলে লিখিয়েছে শরীর।
আমি ইয়োগা করি-চুপ-গোঁসাইয়ের পায়ায় ঠনঠন দাপাই—
প্রাণ যাবে।

ভেতরে কে কাকে দেউল জানে, মহাপ্রভু মেনে সবই ফাঁস হয় ফেলাসি তত্ত্বে।

জালে আঙুল বাঁধে যে জনার, সেজনা ফকিরি করে লিখে দেয় আয়ুস্তর।
ফুরিয়ে আসে দপদপ, চুল শেষে হাড় পোড়ে মানবশিশুর।
দুর্গ বাজায় ঢং ঢং। অপ্সরাসকল বাকল খুলে বগলা নাচে—
                                                                 ইন্দ্রিয় দেখা যায়।

একদিন, লেজঝাপটায় উড়িয়ে দাও ধুলোর ঝান্ডা। 
একজন বনখেকো শিরদাঁড়ায় লেখে সকল ঝরনার রক্তপ্রদর্শনী।


• ঢাকা

অলংকরণের আলোকচিত্র : কালীপদ দেবনাথ

menu
menu