তিনটি কবিতা ♦ আহমেদ শিপলু

মাটির গল্প

ছিলে না আকাশে, ছিলে না পাতালে; ছিলে না কোথাও। অথচ খুঁজলাম অহর্নিশ! কী জাদু এই অনন্ত অনুসন্ধানে! কী মায়া! তুমিই কি জানো?

আমি জানি নাই কোনোদিন তোমাকে, বুঝি নাই কিসের আকাঙ্ক্ষায় এইসব উপাসনা। তোমার আলতো গালে যেখানে বাসন্তীরোদ খেলা করে, কচ্ছপের স্থিরতায় সেখানে শুয়ে থাকে শতাব্দীর বিষণ্নতা! চোখ উপুড় করে ঘুমালো যাঁরা, তাঁরা বোঝেনি কোনোদিন এইসব কোমল দুঃখময়তা।


ঝুল বারান্দায় শুকনো টব, গোলাপের মৃত্যু রেখে গেছে পাতার ইতিহাস। প্রগাঢ় পরিচর্যায় বেঁচে থাকে মাটির গল্প! যেখানে একদিন মিলিত হবে আমাদের অবশেষ, জন্ম নেবে নতুন প্রতীক্ষার সম্ভাবনা। 


সড়কে ফুটেছে মৃত্যুবীজ

সড়কে ফুটেছে মৃত্যুবীজ; মন্ত্রী মশাই হেসেই খুন! এইসব হাহাকার পেরুনো দিন শেষে ঘুমেরা ফেরে না ঘরে; ঘাতক বাসের চাকায় পিষে গেছে কচি ঘুম! গতিময় পৃথিবীর জন্য স্বপ্ন দেখেছিলো যাঁরা; তাঁদের স্মরণে পুষ্পস্তবক রেখে যাই স্কুল বালকদের কবরে!


যে মা তাঁর সন্তানের লাশ বয়ে নিয়েছে! যে পিতা এখনো সন্তানের লাশের হদিস পায়নি! তাঁদের জন্য হাসি পেয়েছিলো যে মন্ত্রীর! তাঁর জন্য আসুন প্রার্থনা করি! তিনি যেনো তাঁর সন্তানের মৃত্যতেও শোক ভুলে এভাবেই হাসতে পারেন!


যে চালকের এই কবিতা পড়ার অথবা বোঝার দুর্ভাগ্য হবে না! আসুন তাঁর জন্যও প্রার্থনা করি! তিনি যেনো তাঁর সন্তানের মৃত্যুশোক সইতে পারেন!

আসুন, আসুন আমরা শোরগোল অথবা গণ্ডগোল কোনোটাই না করি! আসুন আমরা মৃত ব্যক্তির চেয়েও অধিক শান্ত হয়ে যাই! রাস্তার ব্যারিকেড তুলে নিয়ে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় ঘরে ফিরে যাই!


এইসব মৃত্যু কোনো কারণ নয়—যে আপনি চোখের জল ঝরাবেন! এইসব মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনেক নিম্নমুখী! আসুন আমরা বরং আরেকবার মাননীয় মন্ত্রীর মুখোমুখি হই! তাঁর কাছ থেকে সবিনয়ে জেনে নিই এইসব মৃত্যুর উপযুক্ত পরিসংখ্যান! 


অলৌকিক অভিসার

তুমি আছো এই ভেবে পা বাড়িয়েছিলাম একদিন; ঘুরে বেড়িয়েছি ভোর থেকে ভোরে... মেঠো-সন্ধ্যার কাঁধে চড়ে চলে গেছি নির্ঘুমের দীর্ঘ কারাগারে! হয়তো কোথাও তুমিও বসে ছিলে জোড়া শালিকের প্রতীক্ষা নিয়ে।


সেই কবে কোন আহত পাখির করুণ চোখে দেখেছিলাম নির্বাক বেদনা! সেই থেকে আমি আর কারো চোখের দিকে তাকাতে পারি না। কেবলই মনে হতো, তুমি আছো এই পৃথিবীতে; তোমার হাত ছুঁয়ে দিচ্ছে ভোরের রেলিং, টবের সদ্য ফোটা আ্যালমন্ড, তোমার চোখ চেয়ে আছে মুমূর্ষু জোছনার দিকে! 


খুঁজে বেড়িয়েছি তোমায়; হয়তো তুমি তখন পায়রার বুকে ভেসেছো নৌকায়। তোমার চিন্তার আকাশজুড়ে হয়তো আমারই নক্ষত্রসম্ভার! তোমার উদাসীন হাত ছুঁয়েছে নদীর জল; হয়তো আমিই ডুব দিয়ে ছুঁয়ে এসেছি নিঃশর্ত আঙুল! তুমি জানোনাই কোনোদিন। 


তুমি আছো এই পৃথিবীতে। অনড় বিশ্বাসের হাওয়ায় চেপে উড়ে উড়ে... উড়ে উড়ে... একদিন অপেক্ষার উদ্যানে মুখোমুখি দুজন; ছুঁয়ে দিতে চাইলাম তোমার চিবুক! চোখের দিকে তাকাতেই দেখলাম আহত পাখির ডানা ঝাপটানোর ক্লান্তি! আলিঙ্গনে জড়াতেই মনে হলো ধরে আছি বাতাশের পাহাড়, ঝড়ের ডানা! জলোচ্ছ্বাসের মাস্তুল! মাঝির ব্যাকুলতা বোঝে না সওয়ারী, নৈঃসঙ্গের পাল তুলে ভেসে থাকে শুধু অজস্র নক্ষত্র। 


এইসব রাত্রি জাগরণ, অনর্থক কোলাহলমুখর দিন! চলে গেছে সবই। রেখে গেছে শুধু কীর্তনখোলার বুকে তৃষ্ণার্ত ঢেউ! ডুবে যাওয়া সূর্য আকাশে যেমন রেখে যায় অজস্র রঙের সামিয়ানা।
 

menu
menu