তিনটি কবিতা ♦ কায়সার হেলাল
অর্বাচীন মোষ অথবা অভিজ্ঞ মাছরাঙা
তাছাড়া প্রচ্ছন্ন থাকা প্রবল লৈঙ্গিক আগ্রহ থেকে উঠে আসে শুভ্র
রাজহাঁস। অনন্তকাল ধরে খেলছে এরা নিছক সামাজিক খেলনা।
বিত্তের মধ্যপুকুরে উঁকি দেয় আদিপাপের বেখেয়ালি পানকৌড়ি।
বোধের ওপারে থাকা জীববিজ্ঞান খুঁটে খায় এরা ইতিহাসের বুক চিড়ে।
আদৌ কী অলেখা কবিতারা জানে অন্তর্গত বরিষণের হাল-সাকিন?
এখন এরূপে আসে গন্দমকাল। যেনবা
সহস্রবর্ষ ব্যাপি কোন বুড়ো ছড়াচ্ছে অকাল
বসন্তবিলাপ। আর উবে যাচ্ছে—মিলিয়ে
যাচ্ছে শূন্যে-অব্যাখ্যাত অশরীরির মতোন—
ঋতুমতী সমস্ত নারী।
ফলে রশ্মীর মতোন গ্রহলোক থেকে আসে কবিতারা দ্যুতিময়—অথচ অভিশপ্ত বলে
লিখে রাখা যাচ্ছে না খাতায়।
আহ্নিকগতি জারী থাকে। বার্ষিকগতিও।
এঁটো কাদাজলে নিমজ্জমান অর্বাচীন এক মোষও জারী রাখে ক্লেদের চাষবাস।
২.
কুসুম সমীপে লিখে রাখা ঘামসমগ্র উল্টে ভেসে গেলো এলিজাবেথ।
বানের জলের মতো হাহাকার-সমান দূরত্বে তেজি চতুর্দশী ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
ঘাই মারা মাছের মতো ইথারে বেদনার বুদবুদ
তোলে নাচের শুদ্ধ মুদ্রা। জরুরি গর্ভনিরোধ বড়ি ও
সঙ্গমের কসমিক সম্পর্ক ঘিরে দেয়াল তুলে রাখে
ধানমন্ডি আট এবং লেক ও তাঁর লোহার ব্রা। তারপর
হয়তো শাহবাগ-আজিমপুর কিংবা সোহরাওয়ার্দী
উদ্যান। মহানগর থেকে মহানগর, অলিগলি রাস্তা
পেরিয়ে টাউন হল-বাদুরতলা-ঝাউতলা হয়ে পুনরায়
রাজধানীগামী বাস যেন মৃগী উল্লম্ফন তুলে নাচায় বাইজি-নাচন।
আবাসিক তক্তপোষ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ও দুঃসাহসী শুক্লপক্ষরা সেসব দেয়ালে
ঝুলে থাকে অপ্রয়োজনীয় অন্তর্বাসের মতোন।
জেনে রাখা ভালো, কুসুম সমীপে লিখে রাখা ঘামসমগ্র উল্টে
অসহিষ্ণু গন্দমও ভেসে গেলো-যেমন যায় ভেসে দাঙ্গার মড়া নদীতে।
৩.
আমরা তাঁদেরকে খুঁজতে থাকি। ভাবনার অঙ্ক কষতে কষতে খুঁজতে থাকি যে তাঁরা আসলে থাকে কোথায়। সেই লিবিডো আক্রান্ত রাত, বঙ্গদেশি বৃষ্টি, পরিপাটি বিছানা, ঘাম ও এয়ারকুলার ছাপিয়ে রতিকে পাপ জেনে ধাওয়ারত সুযোগসন্ধানীগণ সেদিন মুখ্য হয়ে উঠেছিলো। তারপরও কক্ষবদল আর ক্ষমতাকেন্দ্রীক ঝালবয়ান এসব জঞ্জালকে পেছনে ফেলেছিলো অভিজ্ঞ মাছরাঙার মতো। ফলে অধ্যয়নের জন্য মহান শারীরিক বিজ্ঞানই খাঁটি পুস্তক—এ সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হলো।
অধ্যয়ন শেষে ক্ষিদে পায়। ক্ষিদে পেলে আবিষ্কার হয় ছিঁচকাঁদুনে সেই একই বঙ্গদেশি বৃষ্টি।
জলখাবারের টেবিলে অতঃপর আগন্তুক এক ভয় তাঁদেরকে ভাবিয়েছিলো গভীর। ভয়জনিত তাড়া তাঁদেরকে আছড়ে ফেলেছিলো জরুরি গর্ভনিরোধ বড়ির দুটো স্ট্রিপে। এসব অসূয়াজাত খড়কুটো একত্রিত হলে জেগে উঠেছিলেন মা দূর্গা। অসূর বিনাশে প্রাজ্ঞ দূর্গার কালিক আক্রমণে তাঁদের জোটবদ্ধ হওয়া হয়তো হয়নি ঠিকই। কিন্তু মনোজাগতিক খেয়াল তাঁদেরকে কোনো এক মানসলোকে জোটবদ্ধ করেছিলো বলে শোনা যায়। মনোভ্রমণের তরিকা রপ্ত করে ইদানীং আমরা সেই জোটবদ্ধ হতে পারা’টাকে মনে মনে সাধুবাদ জানাই। এবং তাঁদের ঠিকানার দিকে ধাই। অথবা ধাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি। যদিও ভ্রমণের এ পর্যায়ে মূলস্মৃতি উদ্বায়ী হয়ে পড়লে কল্পনাকে ভোগ করার মনো-অভিলাষ ম্লান হতে থাকে।