পরিযায়ী

ভিন দেশে পরিযায়ী বাড়ি ঘর নাই
দিনভর খেটেখুটে রুজিটুকু পাই
লকডাউন দেশে আর দিন চলে না
জল-রুটি খেয়ে খেয়ে পেট ভরে না।
সরকার কি যে বোঝে ভালো বুঝি না
কোনোক্রমে টিকে থাকি, সুখ খুঁজি না।

হাতে থাকা কটা টাকা ফুরিয়েছে কবে
রোগ নিয়ে আর কত বাড়াবাড়ি হবে?
বৌ বলে, 'মুলুকেই ফিরে যাই বলো?'
কপালে যা লেখা আছে,তাই হোক—চলো।'
'এত দূর রাস্তা, হাঁটা বুঝি সোজা!'
'দেশটার ঘাড়ে আজ আমরাই বোঝা।'

ন্যাশনাল হাইওয়ে পুলিশের মার
বোবা চোখে প্রশ্ন, পথ তুমি কার?
চিঁড়ে মুড়ি পুঁটলিতে সন্তান কোলে
অসহায় মজুরেরা জঙ্গলে চলে
পাহাড়ের কোলে কোলেনদীতীর ধরে
এই দেশ, এই মাটি, যায় সরে সরে।

না চিনেও ওরা ঠিক পায়ে পায়ে বাড়ে।
জানে না ভূগোলে পথ-ম্যাপ কয় কারে।
ইমারত, হাইওয়ে, ব্যারেজ বা কল
কারখানা, ক্ষেতেধান, যেখানেইবল্
ওরাই তো কাজ করে,ওরা দেশ গড়ে—
দেশের বিপদে তাই ওরা বলি চড়ে।

এখন তো ঘন রাত, দিক ভুল হলে?
ধ্রুবতারা  আকাশেতে চুপচাপ জ্বলে।
ঝড় ওঠে, মেঘ ছায় কোন্ দিকে বাড়ি?
ওই দেখো রেলপথ, কু ঝিক গাড়ির
এই পথ ঠিক নিয়ে যাবে বাড়ি দেখো
ভাইসব, পা চালাও বিশ্বাস রেখো।

পা আর চলে না রে, চল্লিশ ক্রোশ!
খিদেতে শরীর মন হয়েছে অবশ।
রেলপথ বিছানায় ওরা ষোলোখান
ক্লান্তিতে ঢলে পড়ে, নিঃসাড় প্রাণ।

ভোর রাতে কু ঝিকঝিক গাড়ি আসে—
সভ্যতা চলে যায়। পড়ে থাকে পাশে
গোটা চার পোড়া রুটি নিষ্প্রাণ লাশ
লজ্জায় রাঙা হয় কচি কচি ঘাস।


শান্তিনিকেতন, ভারত

menu
menu