তিনটি কবিতা ।। রফিক উল ইসলাম

যে তোমার সামনে হাত পেতে

যে তোমার সামনে হাত পেতে দাঁড়িয়ে,
এমনও হতে পারে, তার হাতে
অমবস্যার চাঁদ জেগে আছে! অতি সামান্য অনুদানে
ওই চাঁদ তোমারও হতে পারে। তোমার কুঁকড়ে থাকা করতলে,
তোমার গোটানো আস্তিনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকা
                                           বহুকালের অন্ধকার
পুনর্নিমিত হতে পারে অদৃশ্য কিরণে! তুমি যদি দু-পা
এগিয়ে যেতে পারো, সে হয়তো দু-হাজার পা এগিয়ে এসে
তোমার অবনত পৃথিবীকে
                পুনরায় সঠিক কক্ষে ফিরিয়ে দিতে পারে।

এতসব অস্ফুট অনুকম্পা যার, সে আজ, তিনি আজ
তোমার সামনেই হাত পেতে দাঁড়িয়ে। এমনও হতে পারে,
তাঁর হাতে কাবাগৃহের আলো জেগে আছে!

ব্রহ্মচর্য

যখনই আঁচল ওড়াও, আমার ব্রহ্মচর্য শুরু। মধুনাম বলো প্রিয়জন।
আমি ধেনুসকলের সাথে, উড়িব কুঞ্জে কুঞ্জে। আমি দূরের নদী পার হয়ে যাব।
একক ছিলাম সহস্র হব। মৃগ এবং মৃগনয়নারা ছড়িয়ে আছে যে-মেঘের ফাঁকে,
তাদের সাথে ফুল কুড়োব।

শিশির যেখানে থমকে আছে রৌদ্রছায়ায়, ওই আমাদের গুরুগৃহ। গুরুমাতা
এলোচুলে বাসন মাজেন। আমরা কাচি কাপড়চোপড়। আমার এঁটো, রাজার এঁটো,
পাখির এঁটো সমগোত্র। তপোবনের সীমার পারে দাঁড়িয়ে থাকে রাইকিশোরী।
ধেনুসকল চিনিয়েছিল তাহার লিপি। বৃত্তাকারে গুরুমশায় ঝলসে ওঠেন। আবার
জাগি, আবার পুড়ি বর্ণমালায়।

রাইকিশোরী আঁচল ওড়াও, ধেনুসকল শব্দ চেনাও, একক ছিলাম সহস্র হই। কুঞ্জে
কুঞ্জে উড়ছি শুধু, তপোবন জুড়ে ব্রহ্মচর্য। মধুনাম বলো, মধুনাম বলো, মধুনাম
বলো হোমের শিখা... 

ঠিক কার মুখ

মধ্যরাতে, হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলে, জেগে উঠে
তুমি ঠিক কার মুখ দেখো? অনন্ত আকাশে
                                 হারিয়ে যেতে যেতে
একলা চড়–ই তোমার ঘরের ঘুলঘুলিতে বাসা বুনেছিল,
সামান্য কিছু খড়কুটো নিয়ে। গভীর রাতে
থেমে থাকে তার উৎকণ্ঠার সব কিচির মিচির!
হয়তো সে-ও এক সুভাষিত ভোরের অপেক্ষায়
হঠাৎ ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে। কিন্তু প্রগাঢ় অন্ধকারে
তার মুখ দেখাও যায় না আর!

সন্ধ্যার লেবুফুলে জেগে থাকা শিশিরকণা
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে বলতে চেয়েছিল :
আবার দেখা হবে! কখন আর ঠিক কোথায়,
কিছুই জানা হয়নি তোমার। এখন এই ঘুম-ভাঙা অন্ধকারে
সেই শিশিরকণা কি ঠিক সেভাবেই অপেক্ষা করে আছে
শুধু তোমারই জন্যে? নাকি উড়ে চলে গেছে
অন্য কোনো লেবুফুলের দিগন্তে! কিছুতেই যেন
স্পষ্ট হয়ে উঠতে চায় না আর।

মধ্যরাতে, হঠাৎই ঘুম ভেঙে জেগে উঠে
তুমি ঠিক কার মুখ দেখতে চাও? ঘুলঘুলির এক কোণে
                       অপেক্ষার ডানা গুটিয়ে থাকা
একলা চড়ুই, নাকি লেবুফুলের পাপড়ি ছোঁয়া
সেই মৌন শিশিরকণার?
নাকি এরা কেই নয়,
এরা কেউই নয়!

কলকাতা, ভারত

menu
menu