তিনটি কবিতা ।। আহমেদ মোসলেহ্

তথ্যাবলি নেই কারও কাছে

সিটি কর্পোরেশন করে হিসাব
কতো জন করদাতা
রাজস্ব ভান্ডারের মেদ বাড়িয়ে
কতোটা করেছে পুরু,
আহারে মেদ বহুল দেহ!
চোখের পরিধি বাড়ায় দ্রুত
জিহ্বার নাচে
মনে দেয় হানা ঊনপঞ্চাশ বায়ু।
বাড়িটির হোল্ডিং নাম্বার তো আছে,
মালিকের নাম বদল হলেই বা কী?
প্রয়োজন শুধু করের বাড়তি হিসাব।
ছা পোষা কেরানি থেকে মন্ত্রী মহাশয়
সবারই প্রয়োজন বাড়ে বছরের শেষে
গাড়ি, গহনা বিদেশ ভ্রমণ
তার সাথে যুক্ত হলে প্রমোদকন্যা
জীবনের মানেটা পাল্টায় দ্রুত।

সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ
কেবল কষে হিসাব
কোন রাতে কতো জন যমদূত হেঁটে যায়
হাসপাতালের বেডে
ডাক্তার, মেট্টোন আর ওয়ার্ডবয়
সকালে সবাই হন্যে হয়ে
খবর নেয় রেকর্ড ফাইল খুলে
পাঁচ শত পাঁচ নাম্বার কেবিনটার কী হলো?
যুদ্ধে কে জিতল রাতের বেলায়?

গোর খোদক জানে
দশটা দশে আসবে একটা লাশ
কী প্রয়োজন জানার লাশটা জীবিত না মৃত
বাস্তবে মরে গিয়ে কতো জন বাঁচে
অথবা
বেঁচে গিয়ে কতো জন মরে
এ সংক্রান্ত তথ্যাবলি নেই কারও কাছে।

শেষ রাতের কাব্য

ফ্যান্টাসির সাগর দুচোখের কোনায়
সূচনা করে অনুচ্চারিত মহাকাব্যের
তার শরীরে সাড়াঁশি অভিযান শেষে
নব বর্ষার কলকল ছলছল শব্দ
আমার একান্ত দখলে।

আমার দুচোখে হাটে সাজানো শহর
চেরি ফুল ও কৃষ্ণচূড়া
বৃষ্টিজল, বরফের বিশাল মাঠ
এক সরল রেখায় দোল খায়
শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের কোলাকুলি
আনন্দ মাখামাখি।

দু’চোখের সবুজ
দৈব কোনো শব্দে শঙ্কিত হলে
বিলম্বিত বিকাশ
টপকে যায় সুদীর্ঘ শক্ত সীমানাপ্রাচীর।
আমি বলি, “থামো, থামো”
কে শুনে কার কথা?

নীতিবাগীশ অভিধায় চলতে থাকে অদম্য স্পৃহায়
আমাদের আত্মার কাব্য শেষ রাতের,
শব্দহীন শিৎকার
সময়ের পথ কোটি মাইল
পরিব্রাজক আমি।

দারোয়ানটা সটান ঘুমে
এলসেশিয়ান কুকুরটাও নিস্তেজ
চেঁচামেচি নাই কোথায়ও
হঠাৎ সুদূরের শব্দ কর্ণ কোঠরে
ছায়ার মতো চুপচাপ ঢুকে।

আসে সেই শহর
চেরিফুল কৃষ্ণচূড়া,বরফের মাঠ
বৃষ্টিজল,তামাটে পথ
বর্তুলাকারে নেমে আসা তার কালো চুল
আর নিতম্বের শিল্পময় উত্থান।
জানালার তির্যক আলো
প্লাবন ডাকে বিষণ্নতার ঘরে।

শব্দময় মধ্যরাত

শরীরে সাটানো স্বপ্নের ঢেউ।
ঠেলতে ঠেলতে কুকুর ও মানুষের মিছিল ক্লান্ত অধ্যাপকের স্ত্রী
অবশেষে পেলেন স্থান বারের এককোনে আলোকস্নাত
ড্রামের শব্দে দোল খায় শরীরের বাক
দুর্বিনীত হাত ফিন ফিনে জামার বোতামে
কুমারীদের কটিদেশ বিলুপ্ত ট্রয়ের প্রাচীর
মাদ্রিদের গির্জায় মধ্যরাতের সংকেত ।
পাতায়ার সৈকত হাটে শিল্পের শরীরে
রাজকীয় আসনে ধোঁয়ার নির্যাস
কান পেতে শুনে কেউ কারুকাজ সশব্দে প্লুত
কোনো উৎপাত উৎকণ্ঠা নেই মদের টেবিলে রাশান কালচারে
মাতোয়ারা সব আনন্দ উৎসবে চুকে গেছে দিবসের হিসাব।
লিসবনে মধ্যরাত বাতাসে উড়ে ধ্রুপদী ডানা
লোকজন বারমুখো
হবে মনে অফিস শেষে শ্রাবণ মেঘের শঙ্কায় ছুটে চলা
বাড়িতে ফেলে আসা বালিকা বধূ বাচ্চার নেশায় ।
ঢাকার মধ্য আকাশে চাঁদ
মদ্যপ পুলিশ হাটে রাস্তায় এলোমেলো
শ্যামারা সফর সাথী হৃষ্টপুষ্ট পকেটে রাখে হাত
হামাগুড়ি দেয়া বউ তার বড় বেশি খুশি কিশোর কেরানি পেয়ে
বলে যায় ইতিবৃত্ত জীবন যৌবনের কথা চোথে তৃপ্তির হাসি
খুক খুক কাশিতে কাশেম ভাবে দাদুর অসুখটার বুঝি
বাড়লো বিস্তৃতি বেশ ছুটে গলিমুখে ওষুধের খোঁজে
দোকানি ব্যস্ত বাক বিতণ্ডায় নেশাখোর যুবকের সাথে।

ঝাউতলা, কুমিল্লা

menu
menu