দীপ্তি নাভাল-এর ৪টি কবিতা
দীপ্তি নাভাল-এর ৪টি কবিতা
হিন্দি থেকে অনুবাদ : মানবেন্দ্রনাথ সাহা
ভাবনার কিছু সুতো
ভাবনা কিছু বাঁধা ছিল সুতোর টানে
জটিল ছিল ব্যথার ভিতর ভাসতে থাকা
স্মৃতি যেন মোতির মতো ছড়িয়ে থাকে
এধার ওধার, কাহার পানে!
বইয়ের ভিতর শুকনো
ফুলের সৌরভই
কোন্ পাতাতে লুকিয়ে থাকা
সেই ছবিই!
আধেক লেখা কবিতাটার সেই লেখনি
রাগও ছিল কোন্ কলমে ও মোহিনী
লেখার ভিতর লেখাও থাকে আজ গমকে
তুমিও ছিলে অভিমানী, অভিমানীই।
আওয়াজ ওঠে সেই মিনারে
বুকের ভিতর দঁড়িয়ে থাকা
কী গান করে যখন তখন
একাই থাকা, একাই রাখা!
চোখের কোণে থমকে আছে
পলক দুটি
স্বপ্ন কোথাও চোখের জলে
গেছেই ভেসে।
শিশুর মতো নাদান ছিল, বোকাও আছে কেউ
জানতে চাইল আমার কাছে জীবনটা কী?
আমি বললুম, চোখের জলে লেখা আছে
জীবন মানে নদীর জলে হঠাৎ ওঠা ঢেউ।
কালকের রাত খান খান হয়ে কেটেছিল
কালকের রাত কেটেছিল খান খান হয়ে
ধীরে ধীরে সময় কেটেছিল শান্ত নদীর মতো একাকী
থমকে থমকে আসা বৃষ্টিতে ভিজছিল ভারি পর্দা
নিদ্রাহীন রাতের বিষণ্ণতায় আমিও একাকী
চমকে উঠে বসেছিলাম
স্বপ্নহীন চোখেরা খুঁজে নিচ্ছিল আগন্তুক ছায়াদের।
কোনো নরম ফিসফিস শব্দ আবার
কানের কাছে গুঞ্জন করছিল, যেন
তোমার ঠোঁটে শুনছিলাম আমার প্রিয় নাম
ঘুমের ভিতর জাগল হঠাৎ একটা কথার অনুভূতি
বিছানায় পাশ ফিরে তোমাকে ছুঁতে চাইলাম প্রাণপণ
কিন্তু খোদা! কোথাও তুমি ছিলে না তো!
ধীরে ধীরে সময় কাটে
কাল সারারাত কেটেছিল মধুর প্রার্থনায়।
কোথাও তুমি ছিলে না তো
আঁচলের সঙ্গে লেপটে থাকা অচেনা সোহাগি বাতাসের স্পর্শ
আঁচলের সাথে লেপটে থাকা অচেনা
সোহাগী বাতাসের স্পর্শ
দূরে কোনো গির্জার সন্ধ্যাবেলার ঘণ্টার মতো
শরীরে বাজছে!
দিগন্তের লাল আলো রূপধারা
খেতের ওই প্রান্তে ছড়িয়ে আছে
ময়লা টিলার ঠিক কাছটাতে
এক ভাঙাচোরা জীর্ণ মহকাল মন্দির।
আমি এমনি বারবার চলে আসি এ দিকটায়
কাঁচা মলিন রাস্তা ধরে ধরে
ফসলভরা জাফরানি মাঠ পার হয়ে
এই ছোটো খণ্ডহর পর্যন্ত।
টিলার গায়ে সেঁটে থাকা দেওয়ালে
লেখা আছে আবছা আবছা কিছু নাম
মুসাফির কেউ কেউ লিখে দিয়ে গেছে
নিজেদের নাম ও নিশান যেন খোদাই করেছে!
আর আমি
দরজার আড়ালে লুকিয়ে দেখেছি
একাকী পাথরের বিষণ্ণ ছায়াটিকে।
না ফুল দিয়েছি
না পুজো করেছি
শুধু দূর থেকে দেখেছি
পূজ্য এই মূর্তিটিকে
আর দিগন্তের লালিমা ছড়ানো
অদ্ভুত দৈব খেত পার হয়ে
কতবারই না এমনই চলে এসেছি এখানে
দেওয়ালে লিখে রাখা
আবছা নামের ভিতর খুঁজে পেতে মরিয়া
নিজের নাম!
আমি দেখেছি দূরে কোথাও
আমি দেখেছি দূরে কোথাও দূর পাহাড়ের গায়ে
সন্ধ্যা যখন লুকিয়ে বানায় আস্তানাহীন ছাউনি
আর ছাগলের পাল নিয়ে কোনো রাখাল বালক
কাঁচা পাকা পাকদণ্ডি পথ ধরে
পাহাড় থেকে নিচে নেমে এসেছিল
আমি দেখেছি যখন ঢলে যেতে যেতে
ছায়া উপচে পড়ছে
আর নিচে নীল নীলাঞ্জন উপত্যকায়
ওই একাকী বর্ষার ঝর্ণা
ডুবে যাওয়া সূর্যকে ছুঁয়ে নিতে ছুটে যাচ্ছে।
হ্যাঁ, দেখেছি এখানে আমি, আর শুনেছি যে কত
এই গভীর ঠান্ডা খাদের উপত্যকা
গুন গুণ করেছে কখনো
কোনো বাঁশির সুর...
এমনই পাহাড়ের একদম উঁচুতে
দেবদারু গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
আমি আগ্রাসী দিনকে
রাতের মদিরায় বদলে যেতে দেখেছি।
বহরমপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত