ছোট্ট কিছুর জন্য আমি মরব না

ছোট্ট কিছুর জন্য আমি মরব না
ফারুক ফয়সল

সাহিত্য-সাফল্যের এক বিশাল সাম্রাজ্য করতলে ধরে,
কবিতায় লিখেছিলেন, ‘খুব ছোট্ট কিছুর জন্য যাবেন মরে’।
যদিও বীরের মৃত্যু নিয়ে গেছে তাঁকে, দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে
আঁধার সরাতে আমৃত্যু লড়েছেন, মরেছেন আলোর মিছিলে দাঁড়িয়ে।
করোনাক্রান্তির এই নিদান কালে, হুমায়ুন আজাদ যদি থাকতেন বেঁচে
নিশ্চিত বলতে পারি, ভাইরাস নয়, ধর্মসন্ত্রাসকেই নিতেন বেছে।

ক্ষুদিরামকে যদি দেয়া হত ফাসিঁর বদলে করোনার করুণা,
করোনাকে ঘৃণা ছুঁড়ে, ফাঁসির দড়ি গলায় জুড়ে করতেন দেশ বন্দনা।
বিনয়, বাদল, দীনেশ নিতেন কি মেনে করোনাবাসের বদলে মুক্তি?
ইংরেজ মেরেই মরতেন তাঁরা, ফাঁসি কাষ্ঠের দিকেই পা বাড়াতেন ঝটিতি ।
নিশ্চয় জানি, নেলসন ম্যান্ডেলা এরকম তুচ্ছ মৃত্যুতে অসম্মত হতেন,
বেন্জামিন মোলয়েস রাইফেল ও বুটের কাছেই সমর্পিত হতে চাইতেন।

মৃত্যু তাঁর পায়ের ভৃত্য, মৃত্যুকে সামনে দেখেছেন কত রূপে কত,
জনক আমার ছোট কিছুর জন্যে, সামান্যের কাছে করেননি মাথা নত।
অনেক বড় কিছুর জন্যই মরেছেন, মৃত্যুহীন, ভয়হীন সে মৃত্যু
সে বীরের সন্তান আমরা, কেন করব আলিঙ্গন যে নগন্য,অচ্ছুত !

যত করুক বড়াই, দাঁত খিঁচিয়ে যত দেখাক অদৃশ্য পিশাচ নৃত্যের ভয়,
ভূত প্রেতের খেমটা দেখেছি, কাল নাগিনীর ছোবল ঠেকিয়েছি হাতের চেটোয়।
কলেরাকে দিয়েছি ঠেকিয়ে, সুপেয় জলের ব্যবস্থা করে প্রতি ঘরে
মা মনসার পূজোর দিন গত, বসন্ত দেবীর বাসন্তী রাঙানো দিয়েছি দূর করে।
প্লেগ, ব্ল্যাক ডেথ, ইবোলা, সার্স, গাল ভরা নামের ডাইনি যেই হও,
বহুরূপী, যত বদলাও চেহারা, মানুষের মেধার সার্চে ধরা তুমি খাও।

প্রতি বিশে দাঁত কেলিয়ে, ঢেলেছো বিষ মানুষের দেহের কোষে কোষে,
দু’হাজার বিশে ভোল পাল্টিয়ে করোনার কামড়ে বসছ ফুসফুসে।
যতই নাচো হে, যত কর লম্ফ-ঝম্প, হয়তো আমরা আপাত : পর্যুদস্ত,
চূড়ান্ত খেলায় বিনাশ তোমার, তুমি ক্ষতবিক্ষত, মেনে নাও তুমি—‘মানুষই শ্রেষ্ঠ’।

করোনা হে, শয়তানি, আমার সাথে আঁটতে তুমি পারবে না,
নিশ্চিত জেনো, তোমার মতো ক্ষুদ্রের কাছে আমি পরাজয় মানব না।
জঙ্গের ময়দানে নিশান উড়িয়ে দিচ্ছি ঘোষণা, আমরা মানব সেনা,
খুব ছোট্ট কিছুর জন্য, জেনে রেখো ভালোবাসার জীবন ছাড়ব না।

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

menu
menu