শেষ দৃশ্যে কয়েকটা মেঘলা জানলা
শেষ দৃশ্যে কয়েকটা মেঘলা জানলা
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
দুটো গাছের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায়
দুটো বিছানা গায়ে গায়ে এসে পড়ল
তখনও অনেক দোকানের আলো জ্বলছে
শুকিয়ে আসা ধোঁয়ায় ওপর মাদুর পেতে
একটু একটু কাশতে কাশতে রাত জাগার ছেলেটা
টিকি বেঁধে চোখে জলের ঝাপটা দিতে দিতে
বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছিলো
আর মাথায় আঁকছিলো গাছের বাড়ি
ঝাঁপ ফেললো আর দু চারটে দোকান
নিভে এলো আরও কয়েকটা আলো
বিছানা বেড়ে চললো
আঁকার খাতায় জলজ রঙে তৈরি হচ্ছিল
একটার পর একটা গাছের মিনার
জলের হাতে পড়ে গাছের সবুজ অধ্যায়
যখন মাটির কোষে কোষে দানা বাঁধছিল
ঠিক তখনই মঞ্চ বেঁধে উঁচু দামে বিক্রি হয়ে গেল
রঙতুলি আঁকার খাতা আর আরোগ্যের মহৌষধি
সবুজ জলের অবাধ পথের সহজ সংসার
বন্ধ বাজারের নিথর পাল্লায় জ্বলছে
অভাবী উঠোনের টিমটিমে বাতি
খুব ভোরে যারা দোকান খুলেছিল
তাদের সাইন বোর্ড পাল্টে গেছে
গায়ে গায়ে বিছানা বেড়ে যায়
দুয়ার দিতে দিতে গাছ পেরিয়ে যাচ্ছে দিগন্ত
হঠাৎ কিছু মনে পড়ে যাওয়ার মতো দৌড়ে এসে
গাছের মাথার আগুনে যারা ভাত চাপিয়েছিল
গরম জলে তাদের চাল এখানো ওঠবস করছে
শহরের কোলের কাছে
মাথায় ঘোমটা পরা বন্দরের শুরু হয়েছে হেঁচকি
মাইকে ডাক শোনানো হলেও
পাখিদের পাঠশালার রাস্তায় মরা ঘাসের সংসার
একটা কন্ঠস্বরের শেষবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে
আরও একটা দড়ি পাকানো কণ্ঠস্বর
একটাই অঙ্ক, একটাই ঘর,
একটাই অন্ধকার, একটাই ডাক,
তালপুকুরের তলানির কেরোসিনের লম্ফর
শেষ দৃশ্যে কয়েকটা মেঘলা জানলা ।
হুগলী,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।