অবচেতন মন ও সাহিত্য : প্রভাব এবং ভাবনা
অচেতন বা অবচেতন মন, সাবকনসাস কিংবা আনকনশাস, যেভাবেই বলি, এটি মনের এমন একটি অবস্থা, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে; কিন্তু নিজের চিন্তা-ভাবনা কিংবা সচেতন অনুভূতি দিয়ে বোঝা যায় না। ব্যক্তির জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন স্মৃতি, দৈনন্দিন অভ্যাস, বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে জমা আবেগ, জীবনের এমন সব বিষয়গুলো অবচেতন মনে বসে থাকে। অচেতন মনে জমে থাকা বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ে আমরা যা আচরণ করি তার ওপর প্রভাব রাখে।
অচেতন মন যদি ব্যক্তিকে বা ব্যক্তির চেতন অবস্থাকে প্রভাবিত করে, তাহলে যারা লেখালেখি করেন, তাদের ওপরও এই অচেতন মনের একটি প্রভাব আছে। তাহলে অচেতন মনের ধারণাটি সাহিত্যে কতটুকু প্রভাব ফেলে। আবার সৃষ্ট সাহিত্য কি অচেতন মনের গঠনে কোনো প্রভাব ফেলে! দুইয়ের পরম্পরায় জানব অচেতন মনের ওপর সাহিত্যের প্রভাব এবং সাহিত্যের ওপর অচেতন মনের প্রভাব কীভাবে পড়ে ।
অচেতন মনের ধারণাটি বর্তমানের মতো অতটা স্পষ্ট না হলেও অনেক আগেই জানা ছিল সভ্যতার বিভিন্ন অংশে জ্ঞানীদের। জানা থাকলেও এই ধারণাটি সবচেয়ে বেশি জোরালোভাবে সামনে নিয়ে আসেন মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড। পেশায় একজন চিকিৎসক, চিন্তায় একজন দার্শনিক ফ্রয়েড তার মনো বিশ্লেষণের তত্ত্বে অবচেতন মন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে—অবচেতন মন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এবং আচরণ গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। তার সেই বিখ্যাত তত্ত্ব অনুযায়ী অচেতন মন তিনটি অংশ দিয়ে গঠিত। আইডি, যা একজন ব্যক্তির প্রাথমিক প্রবৃত্তি এবং আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করে। অহং, যা আইডি এবং বাহিরের পৃথিবীর মধ্যে মধ্যস্থতা করে। শেষটি সুপার ইগো, যা একজন ব্যক্তির নৈতিক চিন্তা ভাবনাকে প্রতিনিধিত্ব করে।
ফ্রয়েডের যুক্তি হলো—অবচেতন মন একজন ব্যক্তির অনেক ধরনের স্নায়ুবিক সমস্যা বা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারণ। মনের এসব সমস্যাগুলোকে বুঝতে অবচেতন মনে যে চিন্তা-ভাবনা এবং অনুভূতিগুলো থাকে, তাদেরকে স্বপ্ন বিশ্লেষণ এবং মুক্তভাবে কথা বলানোর মাধ্যমে চিন্তার উপরিভাগে নিয়ে আসা যায়। ফ্রয়েড এমন করে মনের সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ খোঁজার কথা বলেছেন।
এই অচেতন মন যেমন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে, তেমনি লেখক এবং পাঠক মনকেও আক্রান্ত করে। অচেতন মনের বিশাল এবং রহস্যময় রাজ্যে লেখক এবং পাঠক, দুয়েরই থাকে কল্পনার এক বিমোহিত আনন্দ। সভ্যতার প্রথম দিকের পৌরাণিক কাহিনিগুলো থেকে শুরু করে, মধ্যযুগের লোককাহিনি পর্যন্ত, গল্প থেকে শুরু করে, কথাসাহিত্যের আধুনিক কাজ পর্যন্ত, এসব কিছুতে যা কিছুই লেখকরা পরিবেশন করে কিংবা পাঠকরা পড়ার মধ্য দিয়ে অনুধাবন করে, সেই সৃষ্টির উৎসের পেছনে অবচেতন মনের চিন্তাই কাজ করে এবং সৃষ্টি করে। সে জগৎ সম্পর্কে আমরা যেভাবে চিন্তা করি কিংবা তার অনুভূতিগুলো আমাদের ভেতরে আসে, অচেতন মন সেসব গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সাহিত্যের পাঠ আমাদের ব্যক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাহিত্যের পাঠ আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি বিশ্বের আকাশে আমাদের বোঝার হাতকে প্রসারিত করে। চারপাশের সঙ্গে সহানুভূতিশীল হতে দেয়। সাহিত্যের এই পঠন আমাদের সমালোচনামূলক চিন্তা এবং বিশ্লেষণ দক্ষতাকে উন্নত করে। সঙ্গে চিন্তার বিনিময় এবং কমিউনিকেশনসে ভাষার দক্ষতা বাড়ায় সাহিত্য।
সাহিত্য পড়ার সবচেয়ে মজার একটি দিক হলো—এটি নিজেদের বুঝতে এবং আমাদেরকে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে সাহায্য করে। এটি তুলনার চেয়ে একটি সংযোগের বিন্দু চিন্তায় এনে দেয়। যখন আমরা একটি বই পড়ি, কিংবা একটি গল্প পড়ি, সেই বইয়ের কিংবা গল্পের চরিত্রগুলো যে অভিজ্ঞতা এবং আবেগের মধ্য দিয়ে যায়, তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে চারপাশের প্রতি মানবিক হই, চারপাশের সঙ্গে নিজেদেরকে কানেক্ট করতে পারি। চারপাশ বুঝতে গিয়ে নিজেদেরই বোঝার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের মন এবং চিন্তার সঙ্গেও সংযোগ তৈরি করা যায়। জীবনকে বুঝতে এমন ধরনের সুযোগ এবং ক্ষমতা কিংবা দক্ষতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং পরিস্থিতিতে সাহায্য করে। চিন্তার এই ধরনটুকু যেমন অবচেতন ধারণ থেকেই আসে, আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়তাটুকুও অবচেতনভাবেই আমাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা থেকে আসে। শুধু নিজের অঙ্গন নয় কিংবা যে সমাজে আমরা বাস করি, তা নয় কেবল, সাহিত্যের অবারিত হাতের মাধ্যমে বিভিন্ন পটভূমি এবং সংস্কৃতির লোকদের প্রতিও আমরা সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে পারি। বিচিত্রতা আমাদেরকে সমৃদ্ধ করে।
বাস্তব ঘটনা জীবনের বিভিন্ন অবস্থায় নিয়ে যায় আমাদের। কিন্তু এক জীবনে সকল বাস্তব কিছুর মুখোমুখি হওয়া সবার পক্ষে হয়তো সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে সাহিত্যের এমন একটি ক্ষমতা আছে, যা আমাদেরকে ওই বিভিন্ন সময়, স্থান এবং পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়, যা হয়তো আমরা আমাদের জীবনে এখনো সম্মুখ হইনি। এতে আমরা ঘটনার পূর্বেই অথবা জীবনের সেই পর্যায়ে যাবার আগেই চারপাশের বিশ্ব এবং তাতে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষ সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি অর্জন করতে পারি। শুধু বর্তমানটাই পৃথিবী নয়, সাহিত্যের একটি কাজের মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়। এ জানার মধ্য দিয়ে আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে এটি বিবর্তিত হয়ে আজকের বর্তমান অবস্থা এসেছে, তার একটি বৃহত্তর উপলব্ধি সাহিত্য আমাদেরকে দেয়।
বিশ্ব সম্পর্কে বোঝার ক্ষমতাকে প্রসারিত করা ছাড়াও সাহিত্য আমাদের কল্পনাকে উদ্দীপ্ত করে। সাহিত্যের রয়েছে সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করার ক্ষমতা। একটি বইয়ের চরিত্র এবং ঘটনা সম্পর্কে পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে এমনভাবে কল্পনা করতে পারি, এমনভাবে তাদের সঙ্গে জড়িত হতে পারি, যা মিডিয়ার অন্য কোনো ফরম্যাটের মাধ্যমে এতটা গভীরভাবে সম্ভব নয়। একটি গভীর স্তরে একটি গল্পের সঙ্গে জড়িত হওয়ার এই ক্ষমতা আমাদেরকে আরও সৃজনশীল ভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। এক বিশ্বে বসবাস করে নিজের ভেতরে যে আরেক বিশ্ব তৈরি করা হয়, সেই বিশ্বের মধ্যে দিয়ে একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বাহিরের বৃহৎ বিশ্বকে দেখার চোখ তৈরি করে সাহিত্য।
সাহিত্য পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো এটি আমাদের সমালোচনামূলক চিন্তা ভাবনার দক্ষতাকে উন্নত করে। যখন আমরা একটি বই পড়ি, তখন আমাদেরকে গল্পের চরিত্র, ঘটনা এবং থিম বিশ্লেষণ করতে হয় মনে মনে। ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণের এই প্রক্রিয়াটি আমাদেরকে সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সাহিত্যের একটি অন্যতম ফরমেট উপন্যাস। উপন্যাসের কাজ কল্প কাহিনির মধ্য দিয়ে তৈরি চরিত্রগুলোর বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় একটি গল্প বলা। গল্পটির একটি প্লট থাকে, কিছু ইভেন্ট থাকে, কিছু টুইস্ট অ্যান্ড টার্ন থাকে, সেগুলো একটি সিরিজ আকারে মন চিত্রের রেজুলেশন তৈরি করে। সেটি মনে মনে তখন কোনো জায়গা কিংবা সময়ের মধ্যে সেট হয়ে যায়। উপন্যাসগুলো কখনো হয় রহস্যময়, কখনো রোমাঞ্চকর, কখনো বিজ্ঞান কল্প কাহিনি। চরিত্রগুলো কখনো আকর্ষণীয়, কখনো জটিল, কখনো সরল, আবার কখনো সুন্দর গদ্যের মধ্য দিয়ে উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
সাহিত্য পাঠের এই সুবিধা আমাদের অচেতন মনে যেমন জ্ঞানের জায়গাটি তৈরি করে, তার সঙ্গে গভীর মানসিক সংযোগের মাধ্যমে আমাদের মানসিক সমস্যা কিংবা বিড়ম্বনাগুলো সরানো, আমাদেরকে হাসানো এবং আমাদের চোখে জল আনার ক্ষমতা রাখে সাহিত্য। আমাদেরকে একটি নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিভিন্ন আবেগগুলোকে অনুভব করতে দেয় সাহিত্য। এমন অনুভবের মুখোমুখি হতে গিয়ে আবেগগুলোকে আমরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং নিজেদের ভেতরেও একটা প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে পারি। তার মানে অবচেতন মনের গঠনে সাহিত্য অনেকভাবেই ভূমিকা পালন করে ।
সাহিত্যের আরেকটি ফরমেট হল নাটক। নাটকগুলো সাহিত্যের একটা ফসলকে মঞ্চে প্রদর্শন করে। সাহিত্যের সেই পাঠ মঞ্চে প্রদর্শিত কথার আখ্যান থেকে জানা যায়। নাটকেও গল্পের মতো সংলাপ, চরিত্র, প্লট, বিভিন্ন হাস্যকর অবস্থা, এমন সব অনেক কিছুই থাকে। নাটকের কাজ যদিও বিনোদন, কিন্তু এই বিনোদনের মধ্যে মজাদার কথোপকথন, আকর্ষণীয় চরিত্র, আকর্ষক প্লট, এমনকি পুরো ব্যাপারটি লাইভ বলে বিষয়টিতে অবচেতন মনেই অনেক বেশি নিমগ্ন হওয়া সম্ভব হয়।
সাহিত্যের বিভিন্ন ফরমেটের কথা বাদ দিয়ে এবার আসি তার কনটেন্ট। অবচেতন মন যেমন সাহিত্যকে প্রভাবিত করে, আবার সাহিত্য তেমনি আমাদের অচেতন মনকে তৈরি করে। অবচেতন মনকে আধুনিক সাহিত্য প্রভাবিত করার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো প্রতীকীবাদ এবং চিত্রকল্পের ব্যবহার। প্রতীক এবং চিত্রগুলো লেখকদের জটিল ধারণা এবং আবেগগুলোকে একটি সূক্ষ্ম এবং সংক্ষিপ্ত উপায়ে পরস্পরের মতো যোগাযোগ করার অনুমতি দেয়। তাই দেখা যায় বিশ শতকের প্রথম দিকের পরাবাস্তববাদী কবিতা থেকে শুরু করে বিশ শতকের শেষের দিকে কিংবা ২১ শতকের প্রথম দিকের উত্তর আধুনিক উপন্যাসগুলো পর্যন্ত বিভিন্ন ধারা এবং সময়কালের সাহিত্যগুলোতে এই প্রতীক এবং চিত্রকল্পের বারবার ব্যবহার দেখা যায়।
কিছু উদাহরণে আসি, দ্য গ্রেট গেটস বি। অ্যাফ স্কট ফিটজেরাল্ডের একটি বিখ্যাত ক্লাসিক উপন্যাস। ফিটজেরাল্ড তার উপন্যাসটিতে অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে সবুজ আলোর একটি চিত্র ব্যবহার করেছেন। সবুজ আলো একদিকে আশা, এটিকে যেমন প্রতিনিধিত্ব করে, সঙ্গে সঙ্গে একটি অক্ষমতাও প্রকাশ পায় সেটি অর্জনে। এই প্রতীক আলোর মাধ্যমে লেখক সর্বজনীন মানব মনের একটি অভিজ্ঞতাকে বলতে চেয়েছেন যে— এমন কিছুর আকাঙ্ক্ষা, যা আমরা আশা করি, কিন্তু আমরা সেটি অর্জনে অক্ষম। যা একদিকে উদ্দীপন, একদিকে আশা সঞ্চারী, আবার অন্যদিকে না প্রাপ্তির অক্ষমতা।
কথাসাহিত্য ছেড়ে কবিতার দিকে নজর দেই। কবিতা হলো এমন এক ধরনের সাহিত্য যা ভাষাকে ধারণ করে বেড়ে ওঠে এবং ভাষাকে সৃজনশীল ও অভিব্যক্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে। কবিতার থাকে একটি ছন্দময় গঠন। তবে কবিতার সরাসরি কোনো অর্থ অনেক সময় থাকে না, বরং তার অর্থ বোঝাতে কতগুলো রূপক এবং উপমাকে ব্যবহার করে ভাষা। কবিতা আবেগের ভাষাকে ধারণ করে চিন্তাকে উদ্দীপ্ত করে এবং নান্দনিকভাবে তা আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে। কখনো হাইকু, কখনো সনেট, কিংবা কখনো মুক্ত শ্লোকের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন রূপে তার সেই দেহ গঠন প্রকাশ পায়। এর সবটাই তৈরি হয় অচেতন মনের এক রাজ্যে, যেখানে অনুভূতির রং ভাষার নান্দনিকতায় বেরিয়ে আসে।
অচেতন মন সাহিত্যকে যেমন প্রভাবিত করে, তেমনি এই অচেতন মনে সাহিত্যের সৃষ্ট প্রতীক একটি প্রভাব হয়ে আসে। সাহিত্যকে অচেতন মন প্রভাবিত করার এরকম আর একটি উপায় হলো আর্কিটাইপ এবং থিম ব্যবহার। একটি আর্কিটাইপ হলো সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচলিত কোনো সর্বজনীন প্রতীক বা মোটিফ যা সংস্কৃতি এবং সময়কাল জুড়েই প্রদর্শিত হয় এবং একটি যৌথ অচেতনতার মূল হিসেবে কাজ করে। আর থিম হলো সেই সমাজ কিংবা সংস্কৃতিতে কিছু বিস্তৃত ধারণা, যেমন : প্রেম, ক্ষমতা, শক্তি। বেশিরভাগ সাহিত্যের মধ্যে এক ধরনের যে আর্কিটাইপ ব্যবহৃত হয়, তার মধ্যে একটি হলো—একজন নায়ক, তার জীবন যাত্রার বর্ণনা, তার বিভিন্ন অনুসন্ধানের ঘটনা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং বাধার মুখোমুখি হওয়া এবং শেষ পর্যন্ত অনেক প্রতিকূলতার পরেও বিজয়ী হওয়া। ঘটনার মধ্যে সমাজের অবচেতন মনের এই প্রত্নতত্ত্ব সাজিয়ে রাখা হয়। আরেক দিকে থিমগুলো অবচেতন মনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে থাকে। সেখানে তারা সর্বজনীন মানুষের অভিজ্ঞতা এবং আবেগগুলোকে অন্বেষণ করে। যেমন প্রেমের থিমটি প্রাচীনকালের সাহিত্য থেকে বর্তমানে সংস্কৃতি, সব সময়ই পাওয়া যায়। কারণ এটি মানুষের অভিজ্ঞতার একটি মৌলিক অংশ। একইভাবে ক্ষমতা, অপরাধ-বোধ, কারও ক্ষতি করা কিংবা মুক্তির মতো বিষয়গুলো প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরে অবচেতন ভাবে প্রথিত এবং সেগুলো একদিকে যেমন লেখকদের লেখার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে, তেমনি বেরিয়ে আসার পর তা পাঠকদের অবচেতন মনে থিমগুলো ধরে রাখায়।
আধুনিক সাহিত্যের ওপর এই অবচেতন মনের প্রভাব যথেষ্ট। আবার অবচেতন মনের সৃষ্টি এই সাহিত্য পুনরায় তার চারপাশে অবচেতন মন তৈরিতে প্রভাব রাখে। কখনো প্রতীকের মাধ্যমে, কখনো চিত্রের মাধ্যমে, কখনো চরিত্রের মাধ্যমে অবচেতন মন সাহিত্যের এই সৃষ্টি করে যায় এবং সাহিত্য সেই সৃষ্টি দিয়ে অবচেতন মনকে আরও নতুনভাবে বিস্তৃত করে। সজ্ঞানে এটি সম্পর্কে আমরা সচেতন হই বা না থাকি, অবচেতন মন সর্বদাই অবচেতনে কাজ করে। এটির মধ্য দিয়েই বিশ্ব সম্পর্কে আমরা চিন্তা করি, সৃষ্টি করি, অনুভব করি, এবং অনুভবকে গ্রহণ করি।
অপূর্ব চৌধুরী চিকিৎসক এবং প্রাবন্ধিক। উচ্চতর পড়াশোনা ইংল্যান্ডে। বড়দের জন্যে লেখার পাশাপাশি ভালোবাসেন শিশু-কিশোরদের জন্যেও লিখতে। দেশে এবং প্রবাসে বাংলা ও ইংরেজিতে পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং জার্নালে নিয়মিত লিখেন। এ যাবত ১০টি গ্রন্থের প্রকাশ। উল্লেখযোগ্য বই : অনুকথা সিরিজ, জীবন গদ্য, খেয়ালি প্রহর, বৃত্ত, ভাইরাস ও শরীর, রোগ ও আরোগ্য এবং শরীরের যত কেন । বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করেন।