ভাগের তীরে বিদ্ধ দেশভাগ, বিদ্ধ অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
উনিশ’শ সাতচল্লিশ, উল্লাসে ফেটে পড়ার মতো শব্দ ‘স্বাধীনতা’। উনিশ’শ সাতচল্লিশ, বেদনায় মুহ্যমান করে আরেকটি শব্দ ‘দেশভাগ’। সে সময় এ দু’টি শব্দে, আনন্দ বেদনার মিশেলে, মানুষের জীবনে বেজেছিল এক নিদারুণ বাজনা। সে বাজনার চোরা স্রোত বয়ে চলেছে আজও। দাঙ্গা, রক্তপাত, লাঞ্ছনা বঞ্চনা, ভিটেমাটি খোয়ানো ‘দেশভাগ’ দু’পারকে ভেঙে দুমড়ে দিয়েছিল। উন্মূল হয়ে পড়েছিল দু’টো ধর্মীয় জাতিসত্তার নিরীহ মানুষজন, দু’পারে।
ভারতবর্ষের অবারিত প্রান্তরে প্রান্তরে বাহাত্তর বছর পূর্বে কানাকানি হতে হতে জনমানসে ধরা দিয়েছিল দু’টো শব্দ-স্বাধীনতা আর দেশভাগ। আহা কী মুক্তি! আনন্দ উল্লাস! অপরদিকে দেশভাগের নীলকণ্ঠ ঝাঁকে ঝাঁকে উড়লো দিকভ্রান্ত হয়ে। কোটি মানুষের স্বপ্নের অনুবাদে বয়ে চললো কান্নার নদী। ভাগের তীরে বিদ্ধ দেশ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বিদায় করলো আপন হয়ে থাকা প্রাণগুলোকে আরেক নতুন দেশে ঠিকানাহীন। তাদের চেতনায় চৈতন্যে তখন নিদারুণ যন্ত্রণা। বদলে গেল পুরাতন জীবনবোধ। বদলে গেল বন্ধু-স্বজনের পরিচিত বলয়। বদলে গেল মাটির গন্ধ।
ঠিকানাহীন মাটি বদলে ফেলা একজন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলায় চলে যাওয়া আজকের কিংবদন্তি লেখক। পরাবাস্তবতা নয়, নিজ দেশের জলমাটি, কাদায় মিশে থাকা জীবনধারা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতির দোলাচাল পরম দক্ষতায় অনায়াস বলে গেলেন নির্মোহ ভঙ্গিতে। দেশভাগের যন্ত্রণায় বিদ্ধ নীলকণ্ঠ পাখা মেললেন সহজিয়া ভাষার আবেগ নিয়ে। সাহিত্যের দরবারে হয়ে উঠলেন দেশত্যাগী, সহমর্মী মানুষের আপনজন।
তিনি একনাগাড়ে বলে গেলেন, “দেশভাগের অভিমান নিয়ে রাইনাদি গ্রামের সুখের একান্নবর্তী পরিবার, বিষয় আশয় জলের দামে বিক্রি করে দিয়ে পুরো বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুর পরিবার গিয়ে উঠলেন ওপারে। সহায় সম্বল হারিয়ে পড়লেন খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে। বাবা-কাকাদের হাতে কাজ নেই। পায়ের তলায় মাটি নেই। বনজঙ্গলের ভেতর জমি কিনে সাফ-সুতরো করে তাতে বসবাস করতে লাগলেন অতীনের পরিবার। ঘরে খাবার নেই, পরনের কাপড় মলিন ভীষণ আর্থিক অনটন, কিন্তু আত্মসম্মানবোধ প্রখর আর তাই উদ্বাস্তুদের জন্য মাসে যে ২০ টাকার অনুদান তা গ্রহণ করেননি তাঁর বাবা। বাবার যজমানি করে পাওয়া পোয়াটাক চাল, দু’চারখানা কলা, তিন পাঁচটে সুপুরিতে এতগুলো মুখের অন্ন যোগাড় হতো না। তবুও যদি রোজ যজমানি করার সুযোগ পাওয়া যেত! এমন সংকটে পরিবারের অভাব অনাহার সহ্য করতে না পেরে তিনি জাহাজের কোলবয়ের কাজ নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন বন্দরে বন্দরে। হয়তো বন্দরের সন্ধানেই।”
নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, মানুষের ঘরবাড়ি, অলৌকিক জলযান, ঈশ্বরের বাগান বইয়ে নানাভাবেই উঠে এসেছে কেন তারা দেশ ত্যাগ করলেন? দেশভাগের নামে এপারে, ওপারে তাঁরা কী কী অসুবিধায় পড়েছিলেন? এমন বহু প্রশ্ন ও তার উত্তর। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বইগুলো এক একটি নিরপেক্ষ জবানবন্দি। দেশভাগের যন্ত্রণা, অভিমান, পক্ষে-বিপক্ষের সুচিন্তিত যুক্তির মেলবন্ধন। এপার ওপারের জীবনের টানাপোড়েন তুলনামূলক চুরচেরা বিশ্লেষণ।
অতীনের লেখায় ফুটে আছে সুখে দুঃখে পাশাপাশি বসবাস করে হঠাৎ মুসলমান প্রতিবেশীরা নিজেদের জন্য একটা দেশ চেয়ে বসলে অভিমানে দেশত্যাগের ছবি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে বাদ দিয়ে নিজেদের জন্য সমস্ত আলাদা করার পরিকল্পনায় মিছিল, মিটিং, মাহফিলে এখানে ওখানে রেষারেষি থেকে দাঙ্গা এসবও ভয় পাইয়ে দিয়েছিল হিন্দু জনমানসে। তাদের ইত্যাকার স্লোগান ‘‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’’ যতটা না ভয় পাইয়ে দিয়েছিল তার অধিক অভিমান ভর করেছিল অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারে। তিনি বলেছেন, ‘‘দেশভাগের ঘোষণার পূর্বাপর তাঁর রাইনাদি গ্রামে কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি, বরং তাদের গ্রাম ছেড়ে ভারতে চলে যাবার কথায় প্রতিবেশী মুসলিমরা ভেঙে পড়েছিল।’’ তারা দলে দলে এসে বলেছে, “আপনারা কেন চলে যাবেন? তারা অনুনয় করে বলেছে আপনারা যাবেন না”।
সোনা অর্জুন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ফতিমাকে বলেছে, দেশভাগ হলে আমরা চলে যাব। ফতিমা জানতে চেয়েছে, কোথায় যাইবেন? সোনা নিজে জানে না, কিন্তু শশী মাস্টারের বলা কথায় ফতিমাকে উত্তর দিয়েছে ‘হিন্দুস্তান’। ফতিমা বলতে পারেনি সামনের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, ধান, পাট, কলাইয়ের সবুজ সতেজ পাতা, পরিচিত পুকুর, বিলের শাপলা ফুল, মান্দারের ডালে থোকা থোকা লাল ফুল, লটকনের ডালে ঝুলে পড়া ভারী ভারী থোকা, তরমুজের ক্ষেত, নদীর বুকে রাত দিনে ভেসে চলা গয়না নৌকা, মেলার মাঠে অর্জুন গাছ তার নিচে ঠাকুরদার চিতার ওপর শানবাঁধানো বেদী, বর্ষাকালের নদী, উজান বেয়ে মাছেদের কোলাহলে বড়শি, কিংবা জাল পেতে মাছ ধরা এসব ছেড়ে চলে যেতে পারবেন সোনাবাবু? ফতিমা প্রশ্নটা করতে পারেনি, কারণ সোনাবাবুর জ্যাঠামশাই বলেছে, “এদেশে থাকলে আমাদের মান-সম্ভ্রম থাকবে না”। ভূপেন্দ্রনাথের জমিদার কর্তারা বলেছেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এদেশ ছাইড়া পালাও”। পরিবারের লোকজনদের এই কথা বলতে গিয়ে অনুদার ভূপেন্দ্রনাথের আড়াল করা যন্ত্রণা, বুকের ভেতরের কাঁপুনি, ধরা গলার বর্ণনাও বয়ানের সঙ্গে ফতিমার না বলা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ২০ বছর পরে তাঁর দেশভাগ নিয়ে লেখনিতে।
অন্যদিকে অতীন মনে করেছেন মুসলমানদের দেশভাগ চাওয়ার পেছনে নানা যন্ত্রণা বঞ্চনা ছিল। ফলে এই ভাগ চাওয়া অত্যন্ত যৌক্তিক। হিন্দুদের আচার বিচারে তারা ছিল অচ্ছুৎ। ছুঁলে জাত যায়। তারা হিন্দুদের উঠোন অবধি যেতে পারতো, ঘরে ঢোকা তো দূর বারান্দায়ও উঠতে পারতো না। এমন অবহেলারও শিকার ছিল মুসলমান প্রতিবেশীরাই। অথচ বিপদ আপদে কাজে কর্মে তারাই এগিয়ে আসতো সবথেকে আগে। ঈশম, আবেদালী, জালালী, জোটন, ফতিমা, ফতিমার বয়েসের ভারে নুয়ে পড়া দাদি, চাঁদ তারার পতাকা হাতে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান মিছিল মিটিং করে বেড়ানো সামুও তার জলন্ত উদাহরণ, কিংবা সোনার স্কুলের মুসলিম সহপাঠীরা যারা পাগল জ্যাঠামশাইকে বনে-বাদাড়ে, মেলায় হাটে সব জায়গা এক করে খুঁজেছিল। হিন্দু পরিবারটির প্রতি ভালোবাসায় তারা অগ্রণী থাকলেও ধর্মীয় সংস্কারে জন্যে তাদের সমাদর ছিল উঠোনে পাত পেড়ে খাওয়া বা রান্না ঘরের অদূরে পিঁড়ি পেতে বসা অবধি। সোনা ফতিমাকে ছুঁলে স্নান করতে হয় কনকনে শীতের রাতে, তবুও সৌহার্দ্য ছিল, হৃদ্যতা ছিল, টান ছিল, মায়াও ছিল একে অপরের প্রতি। সামু পাকিস্তান চায়, গাঁয়ের মুসলমান লোকজনকে উসকে বেড়াচ্ছে মুসলীম লীগকে ভোট দিতে তাতে শচিকর্তার পরাজয় হবে। সেই সময়ও শচিকর্তা সামুকে বাড়ির উৎসবে আলোকিত করার জন্য ডে-লাইট ধার দেয়, খোঁজ নেয় সামুর মায়ের, ভালো ডাক্তার দেখাতে বলে, ঠিকানা দেয় ভালো কবিরাজের।
এ পারের জমিজমার বেশিরভাগই ছিল হিন্দুদের কুক্ষিগত। সেসব জমিজমায় মুসলিমরা ছিল কেবলই দিনমজুর, কৃষক, বড়জোর বর্গাদার। তাদের ভেতরে শিক্ষা ছিল না। তাদের ভেতরকার নানা কুসংস্কার, অশিক্ষা পিছিয়ে রাখতো হিন্দুদের থেকে। আবার যেহেতু, জোতদার কিংবা জমিদাররা ছিলেন হিন্দু তারা মুসলিম বা নিম্নবর্গের হিন্দু প্রজাদের ঠকিয়েছেন। এতসব নিরীক্ষণে অতীনের ভাবনায় মুসলিমদের আত্মপ্রকাশ প্রকাশের একটা মাধ্যম জরুরি হয়ে পড়েছিল কিন্তু সেটা দেশভাগের মতো নির্মম বিষয় নয়। দেশভাগের ডামাডোলে কোথাও কোথাও রেষারেষির ঘটনা ঘটে থাকলেও অতীনের মানসে, কিংবা বলা যায় সেসবের রেশ কোনো লেখনিতে তেমন করে পাওয়া যায় না। এ কেবল যত্নে এড়িয়ে যাওয়াই নয় এ সুবিচারের মানদণ্ডে নিরপেক্ষ বিচারও বটে। হয়তো তিনি তার লেখায় সাম্প্রদায়িকতার মতো ঘটনা তুলে ধরতে চাননি প্রবল মানবিকতাবোধের দরুন, তা বলে সত্যটাকেও চাপা দেননি, বরং অত্যন্ত সূক্ষ্ম নিবিড় বয়ানে যতটুকু উঠে এসেছে তাতেই পাঠকের চোখে তৎকালীর দৃশ্য নির্মাণে বেগ পেতে হয় না। তাদেরও কষ্টে মন গুমরে ওঠে ঢাকার শহরে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার ফেরে পড়ে সুন্দরী সোহাগী বউ মালতি তার বরকে হারিয়ে বোবা যন্ত্রণায় রাতের বিছনায় শুয়ে অন্ধকার খামচে ধরতে দেখে। বহু স্বামীর ঘর করা জোটনের বুকটাও যখন মালতীর দুঃখে মুচড়ে ওঠে ঠিক তখন একই লয়ে মুচড়ে ওঠে পাঠকের ভেতরটাও। কিংবা মালতীর শৈশবের খেলার সাথী দেশভাগের স্লোগানে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেয়া রাইনাদি গ্রামের সামু সেও কাতর হয় কখনো কখনো রঙহীন সাদা শাড়ি পরিহিতা মালতিকে দেখে। কখনো কখনো তাকে অনুতপ্তও হতে দেখা যায়, তাইতো রাতের আঁধারে মালতীর হাঁস খুঁজতে সেও নৌকার লগি ঠেলে বিলের জলে। ঝোঁপ থেকে কেটে দেয় বেতফলের ডগা।
সেইসব অমলদিনগুলো হারিয়ে দেশভাগের তর্জমায় অতীন বুনলেন গ্রাম্য জীবনের অন্তরঙ্গতার দলিল। শীতলক্ষ্যা, গোয়ালন্দ, মেঘনা, লাঙ্গলবন্ধ, গোয়ালন্দ তারমাঝে রাইনাদি, মুড়াপাড়া, টোডারবাগ কত কত গ্রাম। গ্রামের গায়ে হেলান দিয়ে থাকা আরেক গ্রাম। মাঠের সঙ্গী মাঠ, খাল বিল নদীর সঙ্গী বন আর এসবের সঙ্গী যেন মানুষ। তাঁর বয়ানে “এপার বাংলায় থাকার দিনগুলো ছিল স্বপ্নের মতো। অদ্ভুত স্নিগ্ধ প্রকৃতি। পুকুর, নদী, খাল, বিল, চাষের জমি। ডাঙা জল যেন সমান সমান।”
ঢাকা কলকাতা মাঠে ময়দানে ঝড়ো সংলাপ, রাজনীতি, স্বাধীনতা তুমুলবেগে বয়ে যায়। আঁচ লাগে কিছু গ্রাম্য মানসেও তবু গ্রাম্য জীবনের সুখ-শান্তি, কলহ, প্রেম-ভালোবাসা, যৌনতা নিত্যকার কাজ কর্ম বয়ে চলে নিস্তরঙ্গ নদীর মতো ধীরে অত্যন্ত ধীরে। তখনো জীবনবোধ সবুজ বনানীর মতো আলিঙ্গনাবদ্ধ। পার্বণে পরবে হাতে হাত চোখে মুখে একাত্মতার ঝিলিক। এমন ফ্রেমে বাঁধা অতীনের শৈশব সোনাবাবু নাম নিয়ে।
অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ওপারে গিয়েছেন বাবা, কাকা, জ্যাঠা মা, জেঠিমা ভাইবোনের সঙ্গে। এপারে ফেলে গেছেন সুখ স্বাচ্ছন্দ্য। যে সোনাবাবুরা দুবেলা বড় মাছের পেটি নয়তো গাদা দিয়ে ভাত খেতো দুবেলা সেই সোনাবাবুই তার ছোট ভাই পিলুর সঙ্গে বাজারে বাড়ির চারপাশে যত্ন করে ফলানো সবজি পেঁপেটা, মুলোটা বাজারে বেচে হাতে পাওয়া বারো টাকা থেকে আট আনা পয়সায় পোয়াটাক চাপিলা মাছ কিনে ফেলে বড়লোকি চালে। কিনে নেয় ডাল আলু মশলাপাতি, আনাজের ঝাঁকাতে শোভা পায় বড় বড় বেগুন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে চকিতে দুচোখে খেলে যায় দেশবাড়ির স্মৃতি। বাবা ঝাঁকা ভরতি বাজার করে হাসিমের মাথায় চাপিয়ে দিতেন আর তার হাতে ধরা থাকতো মাছের থলে! আহা সেই দিন! সোনাবাবুর ছোট ভাই পিলু স্মৃতিতে চিড় ধরিয়ে দুখি গলায় বলে ওঠে ‘পেট ভরে ভাত খাবো’ বাবা দেখতে পাবেন না। খুব খারাপ লাগছে। জাহাজের ডেকে কয়েকদিনের অভুক্ত পেটে ভেড়ার মাংস দিয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত খাবার তেষ্টা ট্রেনিংয়ে সোনাবাবুকেই জাগিয়ে রাখে অচেতন হবার প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে।
দেশত্যাগের পর ক’মুঠো অন্নের জন্য মা ভাইবোনদের এই খারাপ লাগাসহ নিজের অজস্র দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে বেয়ে বেয়ে সোনাবাবু বড় লেখক হয়েছেন, বিখ্যাত লেখক হয়েছেন। পেছনের কারণ দেশভাগের আগের স্মৃতিতে জমা, ফুল, ফল, পথ, ঘাট, নদীনালা। লতায় পাতায় লেগে থাকা পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক প্রীতির সম্পর্ক এঁকে। দেশভাগের বেদনায় তাঁর অনুভূতিগুলো মূর্ত হয়ে উঠেছিল কলমের অগ্রভাগে। লিখতে গিয়ে কোথাও থামতে হয়নি দেশভাগকে উপজীব্য করে সেই আখ্যানের বয়ানে। নিজ দেশের, নিজ মাটির মমতায় বেড়ে ওঠার সৌন্দর্যকে কালির অক্ষরে ইটের পাজার মতো সাজিয়ে সাজিয়ে নির্মাণ করেছেন এক একটি দেশভাগের উপাখ্যান।
সাহিত্যিক, গল্পকার কুলদা রায়ের নেয়া এক সাক্ষাৎকারে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “দেশভাগের পর আমরা এখানে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। আজকে আমার যে পজিশন, যে বড় জায়গা হয়েছে, এদেশে না এলে হতো না।” বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহ্বানে দশজন এসেছিলেন বাংলাদেশে, তখন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখ করে বলেছিলেন কেন যে এদেশ ছেড়ে গেলাম! একথা শুনে কবি শামসুর রাহমান তখন তাঁকে বলেছিলেন, “এই দেশ ছেড়ে না গেলে তুমি লেখক হতে পারতে না। তুমি এখন এদেশে আমন্ত্রিত হয়ে আসতে পেরেছো সেজন্যই।” অতীনও তাই মনে করেন দেশভাগ না হলে তিনি লেখক হতেন না। বেদনারে সম্বল করে বেদনাকে দিলেন ভাষা।
• ঢাকা