গুচ্ছ কবিতা ।। অনির্বাণ চৌধুরী 

জীবনতৃষ্ণা

তোমার বুকের আঘাত যে মুছতে আসবে,
তাকেও জিজ্ঞেস কর,
'রাস্তায় কোন অসুবিধে হয়নি তো?'
তার কাছে নিজেকে উজাড় করে দাও,
তবেই বুঝবে হলুদের মর্ম।
ভিনসেন্টের প্রিয় রং!

সত্যের গুপ্তচক্ষু

সমুদ্রতটে বসে,
থমকে যাই কয়েক পলক।
দূর থেকে দেখতে পাই চেনা হাতছানি,
সিগারেট টেনে,
মন-খারাপের ধোঁয়া ছেড়ে,
আমি তাই ভেঙে দিই বালির প্রাসাদ।

প্রবল ঢেউ এর মতো হৃদয়ের ওঠানামা—
অকস্মাৎ দীর্ঘশ্বাস!
মনে পড়ে কখনো কোন নদীর জলে,
একসাথে পা ডুবিয়েছি।
চোরাবালির সুড়ঙ্গ পেরিয়ে,
তাই নিঃসঙ্গতা মেশে ঢেউয়ের হাহাকারে।
আমার ব্যর্থ রবিবারে,
নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকে পঁচিশ বছরের বেকারত্ব!

এই তো বেশ দিনক্ষণ,
এই তো বেশ বেঁচে থাকা!

বিস্মৃতি

এতদিনে বুঝলাম, পৃথিবীর অনেক বয়স বেড়েছে
ভুল হয়ে গেছে এতদিন বড়সড়,
সবকিছুই
ওই চাতকের মতো চেয়ে চেয়ে দেখা
বিস্মরণ চাহনী,
না বলা অভিমান,
আর কিছু কিছু কবিতার প্রথম ছত্র—
এসব কিছু ভুল!
চুলোয় যাক!
ওপরে চেয়ে দেখ
দেখ এরকম আরও কত সারি সারি মুখ,
আকাশে কী ভয়ানক সিঁদুর খেলা!
তার মধ্যে চিনতে পারছ কাউকে?

জন্ম থেকে জন্মান্তরে

ওরা দুজনে বসেছিলো নদীর ধারে।
জন্ম থেকে জন্মান্তরে—
ছড়িয়ে যাচ্ছিল বাদামি বাতাস।
আশপাশ থেকে ভেসে আসা প্রশান্ত প্রকৃতি
যেন অতর্কিতে ফাঁদ পেতে বসেছিল ওদের দুজনের মাঝে।
স্রোতের টানে,  
তখন এলোমেলো হয়ে চলেছে—
ওদের দুজনের বিদেহী আত্মা;
নিশ্চুপ; 
কারুর মুখে কোন কথা নেই—
জোয়ার-ভাঁটার স্খলন;
ওরা দুজনে তখন চুপ করে বসেছিল নদীর ধারে।
ওপারের ঝাউগাছ, 
জামবন, 
শহরতলীর শূন্যতা—
এরা সকলেই জেনে গিয়েছিল ওদের অন্তরের নৈঃশব্দ্য, 
ওরা দুজন মনে মনে কত কথা বলে চলেছে, 
তবুও চারপাশের প্রকৃতি তখন কত নিশ্চুপ!

অভিযোগ

এবারের মতো থেকে যাও,
        ভালোবাসাহীনতায়
থেকে যাও,
হাওয়ার মতো অবস্থানে
ভেঙে দাও,
        সব ঘোরতর অঙ্গীকার,
        মৈথুন,
আর সকল গুপ্ত সত্য
যদি আবার ফিরতে চাও,
বলে যাও,
এতদিন ছিলে,
        সাবলীল অভিমানে—
ছিলে,
        বাস্তবিক কল্পনায়,
এতদিন তবে কেন গোপনে ঢেকে রেখেছিলে,
ভালোবাসাহীন তৃতীয় চক্ষু?


 অনির্বাণ চৌধুরী কবি। বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার বাসিন্দা। সম্প্রতি প্রকাশিত হতে চলেছে প্রথম কাব্যগ্রন্থ : অরূপ তোমার স্বপ্নরাজ্য। 

menu
menu